skip to Main Content

তনুরাগ I গোলকধাঁধায়

টুপ করে পানিতে পড়লেই হিস হিস শব্দ তুলে হাওয়া। চারদিক সুগন্ধে ম-ম। আর সেই গোলানো জলে গা ডুবিয়ে গোসলের অনুভূতি? নেক্সট লেভেল

একটা লম্বা স্ট্রেসফুল দিন শেষে শরীরের ক্লান্তি আসলে কিসে কাটে? সবচেয়ে বেশি ভোট পড়বে—জম্পেশ গোসলে। আর তা যদি সারার সুযোগ হয় টাব ভর্তি পানিতে গা এলিয়ে, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু তা না করতে পারলেও খুব যে অসুবিধার কিছু আছে, তা-ও নয়। শুধু একটু বুদ্ধি খাটানো গেলেই নিত্যদিনকার সাধারণ গোসল থেকে মিলবে বিলাসী অনুভূতি। শুধু সংগ্রহে থাকা চাই একটিমাত্র প্রোডাক্ট। আর দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, অনেক দাম দিয়ে বাজার থেকে এটা না কিনে আনলেও চলবে। কারণ, বাসায় বসে এটি তৈরি বিশেষ কঠিন কিছু নয়। একদম বেসিক কিছু উপাদান আর স্টেপ-বাই-স্টেপ গাইড মেনে চললেই হবে। কথা হচ্ছে বাথ বম্ব নিয়ে।
সূত্রপাত
বাথ বম্বের শুরুর গল্পটা কিন্তু জবর। অ্যালকা সেল্টজার বা অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট নিয়ে দারুণ কৌতূহলের ফলও বলা যায় একে। সময়টা ১৯৮৯। বিখ্যাত ব্রিটিশ বিউটি ব্র্যান্ড ‘লাশ কসমেটিকস’-এর কো ফাউন্ডার মো কনস্টেনটাইন এবং তার স্বামী মার্ক কনস্টেনটাইন তাদের বাগানে বসেই সারেন পুরো নিরীক্ষা। উদ্দেশ্য ছিল নিত্যদিনকার গোসলের টয়লেট্রি আইটেমে অভিনব কিছুর যোগ। চেষ্টা ছিল অ্যাকুয়া সিজলার তৈরির। প্রথম দফায় ফল আসে অনেকটা অ্যাসপিরিন ট্যাবলেটের মতোই। পরে তারা কাজ শুরু করেন নিত্যনতুন মোল্ড দিয়ে বাথ বম্ব তৈরির। যোগ করতে শুরু করেন হরেক রকম উপাদান। কনস্টেনটাইন দম্পতি অরিজিনাল বাথ বম্বের পেটেন্টের জন্য আরজি দাখিল করে, ‘কসমেটিক টু গো’ ব্র্যান্ডের অধীনে। কিন্তু তা বাতিল হয়। পরে ২০১৪ সালে একটা নতুন পেটেন্ট জারি হয় কসমেটিক ওয়ারিয়রস লিমিটেডের (লাশ কসমেটিকস ট্রেডমার্কের মালিকপক্ষ) নামে, বাথ বম্ব তৈরির পুরো প্রক্রিয়া সংরক্ষণের স্বার্থে। তুলনামূলক দুর্বল অ্যাসিড আর বাইকার্বনেট বেইজ হচ্ছে বাথ বম্বের প্রাথমিক উপাদান। শুকনো অবস্থায় একদম মামুলি, কিন্তু পানি ছুঁতেই জাদুর ফোয়ারা ফোটায়। মিনিটখানেকের ফিজের পর মিলিয়ে যায় পানিতে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে পুরো প্রক্রিয়ার। অ্যাসিড বেডস বিক্রিয়ার কারণে সাইট্রিক অ্যাসিড আর সোডিয়াম কার্বনেট পরিবর্তিত হয় মোনোসোডিয়াম সাইট্রেট এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডে। এ ছাড়া বাকি উপাদানগুলো পরিবর্তিত হতে পারে পছন্দ অনুসারে। তালিকায় আছে সুগন্ধি আর নানা রং। পানিকে সুবাসিত ও রঙিন করতে।
বাসায় বানাতে
পুরো প্রক্রিয়া খুব সহজ। মিনিট বিশেক সময় হাতে থাকলেই যথেষ্ট। সঙ্গে বাড়তি এক থেকে দুদিন, বাথ বম্ব পুরোপুরি শুকানোর জন্য। অনেকের জন্য দারুণ অ্যাকটিভিটি হতে পারে এগুলো তৈরির সেশন। যেহেতু সুগন্ধি আর রং নিয়ে নিরীক্ষার সুযোগ থাকে, তাই সৃজনশীল উপায়ে সেলফ কেয়ার সেরে নেওয়া যায় বাসায় বসেই। বাথ বম্বগুলোর রেসিপি সেই ঘুরেফিরে একই। বেসিক উপাদান এবং সেগুলোর পরিমাপেও হেরফের খুব একটা হয় না। বম্ব তৈরির মূল উপাদান সাইট্রিক অ্যাসিড, অনলাইনে যা এখন খুব সহজলভ্য। তবে ত্বক স্পর্শকাতর হলে এর বিকল্পও ব্যবহারযোগ্য। লেবুর রস, ক্রিম অব টারটার, বাটারমিল্ক পাউডার থেকে যেকোনো একটি। অথবা বেকিং পাউডার আর অ্যাপল সিডার ভিনেগারের মিশ্রণও এ ক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ। ফুড কালারিং ব্যবহার করা যায় বাথ বম্ব রঙিন করে তুলতে। কিন্তু ত্বক স্পর্শকাতর হলে তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো; বরং ব্যবহার করা যেতে পারে প্রাকৃতিক কোনো রঞ্জক। এ ছাড়া যেসব এসেনশিয়াল অয়েল আর কর্নস্টার্চ ব্যবহার করা হয়, তা স্পর্শকাতর ত্বকের যত্নে ইতিমধ্যে বহুল ব্যবহৃত। তারপরও কোনো অস্বস্তি হচ্ছে কি না, সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। সুগন্ধিযুক্ত পণ্য ব্যবহার ত্বকের স্পর্শকাতরতা বাড়ায়। চাইলে সেটাও বাদ দেওয়া যায় তালিকা থেকে। উপাদানগুলো কী পরিমাণে নিতে হবে, তা জেনে নেওয়া জরুরি।
 ১ কাপ বেকিং সোডা
 আধা কাপ সাইট্রিক অ্যাসিড (বিকল্প হিসেবে একই পরিমাণের লেমন জুস অথবা ক্রিম অব টারটার অথবা বাটারমিল্ক পাউডার নেওয়া যেতে পারে। কোয়ার্টার কাপ করে বেকিং পাউডার এবং অ্যাপল সিডার ভিনেগারও ব্যবহার করা যেতে পারে।)
 আধা কাপ এপসম সল্ট
 আধা কাপ কর্নস্টার্চ
 প্রায় ১ টেবিল চামচ পানি
 ১২ টেবিল চামচ এসেনশিয়াল অয়েল (ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস, রোজ, অরেঞ্জ অথবা লেমনগ্রাস)
 ২ টেবিল চামচ তেল (জোজোবা, সুইট আমন্ড, নারকেল, অলিভ অথবা বেবি অয়েল)
 কয়েক ফোঁটা ফুড কালারিং
 পছন্দসই মোল্ড। মিনি মাফিন টিন, ক্যান্ডি প্যান ছাড়াও বিশেষ করে বাথ বম্বের জন্য তৈরি গোলাকার প্লাস্টিক মোল্ড এ ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়
 শুকনো ফুল অথবা সুগার কেক ডেকোরেশন; তবে বাধ্যতামূলক নয়
প্রথমে শুকনো উপাদানগুলো একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। ঢাকনাসহ পাত্রে তরল উপাদানগুলো নিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিয়ে শুকনো মিশ্রণের ওপর তরল উপাদানগুলোর মিশ্রণ ঢেলে নিয়ে হাত দিয়ে ভালো করে মথে নিতে হবে। তারপর দিতে হবে সাইট্রিক অ্যাসিড। সামান্য ফিজ তৈরি হতে পারে সঙ্গে সঙ্গে, তবে ভয়ের কিছু নেই। পুরো মিশ্রণটি সামান্য ঝুরঝুরে টেক্সচারের হবে, অনেকটা সমুদ্রের ভেজা বালুর মতো। তারপর মিশ্রণটা পছন্দসই মোল্ডে পুরে নেওয়া চাই। চাপ দিয়ে গড়ে নিয়ে, মোল্ড খুলে বের করে ওয়াক্স পেপারের ওপর রেখে দিতে হবে রাতভর; শুকিয়ে আসার জন্য। আর ব্যবহারের আগে এক অথবা দুই দিন অবশ্যই ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। ব্যস।

 বিউটি ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top