টেকসহি I বর্ণবৈষম্যের বিভীষিকা
২১ মার্চ। ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য এলিমিনেশন অব রেসিয়াল ডিসক্রিমিনেশন বা আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস। বর্ণবৈষম্যের বিষ কত ভয়ানক মানবসভ্যতার জন্য? আর কীভাবে সম্ভব পরিত্রাণ?
২১ মার্চ ১৯৬০। দক্ষিণ আফ্রিকার শার্পভিলে জাতিগত বর্ণবৈষম্যের বিল পাসের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলে নামে সাধারণ মানুষ। দাবি একটাই—গায়ের রঙের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করা চলবে না। কেন এই দাবি তোলা হবে না, বলুন? এমনিতেই ষোলো শতক থেকে ঔপনিবেশিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকা। তার ওপর সাদা চামড়ার বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের হাতে এই অঞ্চলের কৃষ্ণাঙ্গদের ভাগ্যে জুটেছিল কেবল বঞ্চনা ও নিপীড়ন। গায়ের রঙের ভিত্তিতে চুপ করে সইতে হতো অত্যাচার। এর মধ্যে কফিনের শেষ পেরেক পোঁতা হয় ১৯৪৮ সালে। পাস হয় বর্ণবাদ আইন।
আগে নিয়মিত নির্যাতন তো ছিলই, এখন সেখানে প্রয়োগ ঘটে আইনের। এই আইন অনুসারে চামড়ার রঙের ভিত্তিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ মানুষ ছিল প্রথম শ্রেণিতে। তাদের পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, বহুজাতীয় লোকজন ও ভারতীয় শ্রমিকদের বংশধরেরা। এই ভাগের সঙ্গে সঙ্গে আরও জোরালো হয় বৈষম্য। থাকার স্থান, কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থা—সবেতেই ছিল বিস্তর বাধা। এমনকি শহরে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রবেশে ছিল নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ কাজে শহরে প্রবেশ করতে প্রয়োজন পড়ত অনুমতিপত্রের। সরকারি যানবাহন, পার্ক, সমুদ্রসৈকত, সিনেমা হল, রেস্তোরাঁ—সবই ভাগ হয়েছিল গায়ের রঙের ভিত্তিতে। ‘শুধু শ্বেতাঙ্গদের জন্য’ লেখা থাকলে সেখানে প্রবেশ করতে পারতেন না অন্য বর্ণের কেউ।
এত অত্যাচার সইতে গিয়ে আর নীরব থাকতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গরা। ১৯৬০ সালে জাতিগত বর্ণবৈষম্যের বিল পাসের বিরুদ্ধে তাই তারা শার্পভিলে আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শেষতক শান্তিতে মেটেনি। বিনা কারণে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশ। তাতে প্রাণ হারান ৬৯ জন কৃষ্ণাঙ্গ এবং আহত হন প্রায় ১৭৯ জন। এই ঘটনা নাড়িয়ে দেয় পুরো বিশ্বকে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
১৯৬৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক প্রস্তাবে শার্পভিল হত্যাকাণ্ড স্মরণে প্রতিবছরের ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য নির্মূল দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বর্ণবাদ ও বর্ণবৈষম্য প্রতিরোধে একটি কর্মসূচি প্রণয়ন করে এবং ২১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া বর্ণবাদবিরোধী সংহতির সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দেয়। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর সব দেশ থেকে জাতিভেদ ও বর্ণবৈষম্যের মতো ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি নির্মূল করা এবং একটি বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ে তোলা।
দিবসটি বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়, জাতিগত বৈষম্য এখনো অনেক দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিসরে গভীরভাবে প্রোথিত। যদিও গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে; তবু পদ্ধতিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য, সহিংসতা এবং সামাজিক নিপীড়নের কারণে বহু মানুষ প্রতিনিয়ত অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। দিনটি জাতিগত বৈষম্য ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি পুনর্নবীকরণের জন্য নির্ধারিত।
সহজ কথায়, বর্ণবাদ এমন একটি বৈষম্যমূলক আচরণ, যা মানুষের মধ্যে বিভাজন ও পার্থক্য তৈরি করে। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা এবং অক্সফোর্ড ডিকশনারির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বর্ণবাদ হলো সেই দৃষ্টিভঙ্গি, চর্চা অথবা কার্যকলাপ, যেখানে বিশ্বাস করা হয়—মানুষ বৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং কোনো কোনো গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর চেয়ে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য উঁচু অথবা নিচু; কিংবা তার ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকারী; অথবা বেশি যোগ্য কিংবা অযোগ্য। এটি বৈষম্য, অবমাননা এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘনের অন্যতম প্রধান কারণ। বর্ণবৈষম্য কখনো ত্বকের রং হিসেবে, কখনো আঞ্চলিকতা বিবেচনায়, আবার কখনো গোত্র দিয়ে হতে পারে।
বর্ণবাদের ধারা
ডিজিটাল যুগ আমাদের জীবনে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিস্তারের ফলে মানুষ এখন মুহূর্তেই তথ্যের আদান-প্রদান করতে, একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হতে এবং বৈশ্বিক ইস্যুতে একসঙ্গে কণ্ঠ মেলাতে পারে। কিন্তু এই ডিজিটাল বিপ্লবের ছায়ায় লুকিয়ে আছে বর্ণবাদ ও ঘৃণার নতুন রূপ। আগে যেখানে বর্ণবাদ মুখোমুখি কথোপকথন বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সহজে ছড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টিকটক ভিডিও কিংবা ইউটিউবের কমেন্ট সেকশন—সবখানেই জাতিগত বিদ্বেষ ও বৈষম্যের ছাপ স্পষ্ট। সাইবার বুলিং, ঘৃণাত্মক মন্তব্য এবং বর্ণবাদী প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নতুন ধরনের জাতিগত বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। অনেক প্ল্যাটফর্ম এই ধরনের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও অনলাইন বর্ণবাদ এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ডিজিটাল বর্ণবাদের পাশাপাশি জাতিগত বৈষম্যও বর্ণবাদের আরেকটি ধারা। জাতিগত বৈষম্যের ইতিহাস সুপ্রাচীন। পৃথিবীর বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী শাসিত ও শোষিত এবং বৈষম্যের শিকার হয়েছে। দাসপ্রথা কিংবা উপনিবেশবাদের কথা এলেই প্রথমে উঠে আসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আমেরিকার নাম। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো দীর্ঘদিন আফ্রিকান, এশিয়ান এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখেছিল। ১৬১৯ সালে প্রথম আফ্রিকান দাসদের আমেরিকায় আনা হয়েছিল, যা কয়েক শতাব্দী ধরে এক বিশাল বৈষম্যমূলক কাঠামোর জন্ম দেয়। ব্রিটিশ, ফরাসি, ডাচ এবং অন্যান্য ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উপনিবেশ স্থাপনের ফলে বহু জাতি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, পরিচয় ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হারিয়েছে।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও জাতিগত সংখ্যালঘুরা অনেক দেশে চাকরি পায় নিম্ন আয়ের। তা ছাড়া উচ্চশিক্ষায় প্রবেশাধিকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং বাসস্থান পাওয়ার ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার হয়। বিচারব্যবস্থায়ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সঙ্গে বৈষম্যের ছাপ স্পষ্ট দেখা যায়। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বিশ্বব্যাপী উত্তরাধিকারগত বৈষম্য ও অভিবাসী বিদ্বেষ বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক অভিবাসী বৈষম্য ও শোষণের শিকার হচ্ছেন।
বর্ণবাদের জলজ্যান্ত সাম্প্রতিক উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়োপোলিসে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড। স্রেফ ২০ ডলারের জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাকে। অতঃপর বিচারিক আদালতে নেওয়ার আগেই পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় তার। কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার দৌলতে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ ডেরিক শেভিন যুবক ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে তাকে হত্যা করেন। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু অবশ্য কাঁপিয়ে দিয়েছিল পুরো বিশ্বকে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান প্রতীক হয়ে ওঠে।
অনেক দেশ জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন ও সংস্কার করেছে। ১৯৬৫ সালের জাতিগত বৈষম্য নির্মূল কনভেনশন (আইসিইআরডি) জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি। দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন সংবিধান সমতার অধিকার নিশ্চিত করে, আর যুক্তরাজ্য ও কানাডায় বৈষম্যবিরোধী আইন কার্যকর রয়েছে। ২০০১ সালে জাতিগত ভেদাভেদ ও বর্ণবাদবিরোধী বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান শহরে আবার একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল জাতি ও বর্ণের সমস্যাকে দূরীভূত করা এবং নতুনভাবে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি নেওয়া। এ ছাড়া ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের জন্য আন্তর্জাতিক দশক ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশে বর্ণবাদ
বাংলাদেশে হিজরা, যৌনকর্মী, দলিত, হরিজনসহ অনগ্রসর নাগরিকদের প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপের জন্য ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের আইন মন্ত্রণালয় ‘বৈষম্য বিলোপ আইন, ২০১৪’ খসড়া এবং ২০১৮ সালে মানবাধিকার কমিশন ‘বৈষম্য বিলোপ আইন, ২০১৮’ তৈরি করে। পরিতাপের বিষয়, এখন পর্যন্ত খসড়া আইন চূড়ান্ত আকারের আইন হিসেবে আলোর মুখ দেখেনি।
আইন কমিশনের রিপোর্টে সামাজিক নিগ্রহ ও অস্পৃশ্যতার শিকার প্রায় ২৩ রকমের দলিত শ্রেণির মানুষের কথা বলা হয়েছে। দলিত শ্রেণির মানুষের বাইরেও এই আইনের সুরক্ষার আওতায় হিজড়া, যৌনকর্মী, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রান্তিকতা, বঞ্চনা, ঘৃণা এবং অধীনস্থতার বিষয়গুলোও আনার প্রস্তাব করা হয়। জন্ম ও পেশাগত কারণে বাংলাদেশে প্রায় ৭৫ লাখ দলিত জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার। অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতার বাইরেও শুধু জাত-পাত-ধর্ম পরিচয়ের জন্য অনেক মানুষ এদের সঙ্গে একত্রে খান না, বসেন না, চাকরি দেন না, বাচ্চাদের স্কুলে পর্যন্ত ভর্তি নেন না। এমনকি অনেক পেশার মানুষকে সমাজে এখনো অবমাননাকর ভাষায় সম্বোধন করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গনির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করা হলেও জাত-পাতভেদে বৈষম্যমূলক আচরণ বিদ্যমান আছে দেশের বিভিন্ন পেশাভিত্তিক ও ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর প্রতি। বৈষম্য বিলোপ আইন কার্যকর হলে বৈষম্যের শিকার ব্যক্তি মামলা করতে পারবেন এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত মানুষগুলো উপকৃত হবেন।
২০১৪ সালের খসড়া আইনে বলা আছে—ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, শারীরিক, মানুষিক ও লৈঙ্গিক প্রতিবন্ধিতা এবং কথিত অস্পৃশ্যতার অজুহাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বৈষম্যমূলক কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। প্রস্তাবিত খসড়ায় অবহেলিত জনগোষ্ঠীর লোকদের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা লাভে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে প্রথমবার ২ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দিতে পারবেন আদালত। পরে প্রতিবারের জন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। শিক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ, কর্মলাভ, জনস্থল, সর্বজনীন উৎসব, নিজ উপাসনালয়ে প্রবেশ ও অংশগ্রহণে বাধা প্রভৃতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
ঐতিহাসিকভাবে সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের দেশ বাংলাদেশ। যার রেশ বইছে হাজার হাজার বছর ধরে। সুদূর অতীত থেকে নানা ধর্ম, মত ও পথের সহাবস্থান ছিল এই ভূখণ্ডে। সনাতন, বৌদ্ধ, ইসলাম একই সমাজদেহে ঠাঁই পেয়েছিল। চার্বাক, বৌদ্ধ সহজিয়া, সুফি, বৈষ্ণব, বাউলেরা মানবজমিনে ফুটিয়েছিল শত শত সৌহার্দ্যরে ফুল। এর কারণ কেবল বহুত্ববাদ। কারণ, বহুত্ববাদী সমাজই শিখিয়ে দিতে পারে সকল প্রাণের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান, মর্যাদা ও দায়িত্ববোধ।
বৈশ্বিক দিক থেকে চিন্তা করেই হোক কিংবা রাজনৈতিক দিক—অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের নানা স্তরে। এই অস্থিরতা কমাতে অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ। তাই আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবসে সবার অঙ্গীকার হোক দেশের সকল জাতি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, পেশা, লৈঙ্গিকভিত্তিক বিদ্যমান বৈষম্য বিলোপের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গঠনে অবদান রাখার।
বর্ণবৈষম্য দূর করতে শিক্ষার প্রসার, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান, আইন প্রয়োগসহ সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি। একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য প্রত্যেককে বর্ণবৈষম্যবিরোধী মানসিকতা গড়ে তোলা চাই। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি সমান, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সংগত সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা ভাষার কারণে কাউকে বৈষম্যের শিকার হতে হবে না।
সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
ছবি: ইন্টারনেট