ফিচার I খেজুরের খাদ্যগুণ
খেজুর রাজকীয় খাবার! রমজান মাসে ইফতারে প্রথম খাবার হিসেবে অনেকে একে বেছে নেন। এর পেছনের কারণ ধর্মীয়। আবার এই ফলের পুষ্টিগুণও অনন্য। সারা দিন সিয়াম সাধনার পর শরীরে এটি শক্তি জোগায়। সুগন্ধ ও লোভনীয় স্বাদের পাশাপাশি রোগ নিরাময়েও উপকারী। প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—কী নেই খেজুরে! মজার বিষয় হলো, কেনার কিংবা খাওয়ার সময় আমরা অনেকে জানতে চাই না, আসলে কোন খেজুর বেছে নিচ্ছি। স্বাদ, আকার ও পুষ্টিগুণে একেক খেজুর একেক রকম; এমনকি উপকারিতাও ভিন্ন।
ডেগলেট নুর এমন এক ধরনের খেজুর, যেটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। কারণ, এর মিষ্টতা কম। শর্করার পরিমাণ কম এবং ফাইবার বেশি থাকায় এই খেজুর স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য দারুণ অপশন। বাজারে বেশ সহজলভ্যও। যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তারা নিজেদের পাতে জায়গা করে দিতে পারেন ডেগলেট নুরকে। হলুদ রঙের বারহি নামের আরেকটি খেজুরও ওজন কমানোর জন্য সুপরিচিত। এই খেজুর খেলে মিষ্টি খাওয়ার ঝোঁক কমে; আবার শরীর প্রয়োজনীয় ফাইবারও পাবে। মেদ কমাতে খুবই উপযোগী। তবে সকালে খেলে এর সুফল বেশি মেলে। রোজার মাসে তাই সেহরিতে শেষ খাদ্য হিসেবে এটি গ্রহণ করতে পারেন। মিষ্টি কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন বারহি খেজুর।
আজওয়া খেজুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে প্রচুর প্রাকৃতিক শর্করা, ফাইবার, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। আরও রয়েছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই খেজুর এনার্জির ভালো উৎস এবং তাৎক্ষণিক শক্তি এনে দিতে সক্ষম। প্রাকৃতিক শর্করা যেমন শক্তি প্রদান করে, তেমনি উচ্চ ফাইবার ভূমিকা রাখে হজমশক্তির বৃদ্ধি ঘটানো এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে। অন্যদিকে, সুক্কারি খেজুরের নাম আরবি ‘সুক্কুর’ (বাংলায়, ‘চিনি’) শব্দ থেকে এসেছে। এটি সৌদি আরবের আল কাসিম অঞ্চলে চাষ করা হয়। খেজুরটি দাঁতের ক্ষয়রোধ, কোলেস্টেরল কমানো এবং ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক।
প্রিমিয়াম মেডজুল খেজুর হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তপ্রবাহে গতি সঞ্চার করে। সামান্য পরিমাণে খেলে ক্ষুধার ক্তীব্রতা কমে। এই খেজুরে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। এতে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। মেডজুল খেজুর ডি-হাইড্রেশন রোধ করে। এ ছাড়া শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য ধরে রাখে।
সাফাভি খেজুরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম। যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকায় আমরা একে ডায়েট চার্টে চাইলেই রাখতে পারি। চিনির পরিবর্তে এই মিষ্টি সাফাভি খেজুরকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা সম্ভব। এটি হৃৎস্পন্দনের হার ঠিক রাখে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেয়।
খেজুরের উপকারিতা পেতে কেনার সময় কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা চাই। খেজুর যেন অতিরিক্ত শুকনা না হয়। এ ধরনের খেজুর খেতেও শক্ত হয়। কিছুটা ভেজা খেজুর সারা দিন রোজা রাখার পর বাড়তি প্রাণশক্তি এনে দিতে পারে। মেয়াদ উল্লেখ করা খেজুর কেনা আবশ্যক। প্রতিটি খেজুর আলাদা থাকে, এমনটা দেখে কেনা এবং একসঙ্গে দলা পাকানো খেজুর না কেনাই শ্রেয়। অনেক দিনের পুরোনো খেজুরের গায়ে সাদাটে একধরনের ফাঙ্গাস পড়ে যায়। কেনার সময় তাই সতর্কতা জরুরি।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট