skip to Main Content

পাতে পরিমিতি I পানিশূন্যতা পূরণে

রোজায় ডিহাইড্রেটেড লাগতে পারে যে কারোরই। যেহেতু সূর্যের আলো ফোটার বেশ আগে থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয়, তাই সেহরি থেকে ইফতার এবং ইফতারের পরের খাবারগুলো বুঝেশুনে বাছাই করা জরুরি। রইল পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশির পরামর্শ

রোজার শুরুতে আনকন্ট্রোলড ডায়াবেটিস, ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালেন্সড, কনস্টিপেশন, ভার্টিগো, দুর্বলতা অনুভবসহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে রোজার আগে থেকে পূর্বপ্রস্তুতি; যেমন ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণের সময় ও পরিমাণ ঠিক করে নেওয়া, পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে ডায়েট তৈরি করে নিতে পারলে এ ধরনের বাড়তি শারীরিক জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। শরীর এনার্জেটিক ও হাইড্রেটেড থাকবে, এমন কিছু খাবার রাখা চাই পাতে।
পানীয়ে পূর্ণতা
 দুধ: সেহরি বা ইফতারিতে ওটস মিল্ক দিয়ে তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে সহজপাচ্য মিল। দেহে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এটি পানি ও এনার্জির ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে।
 তরমুজ: রসাল ফলগুলোর মধ্যে আম ও কাঁঠাল আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। তবে এই ধরনের ফলের আগেই যে ফল বাজারে মোটামুটি ফাগুনের পর থেকে পাওয়া যায়, সেটি তরমুজ। গ্রীষ্মকালীন এই ফলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ইত্যাদি। এ ছাড়া ৯০-৯৫ ভাগ পানিসমৃদ্ধ এই ফল। তাই সারা দিনের রোজা শেষে সরাসরি কিংবা জুস বানিয়ে তরমুজ খেতে পারেন। এই ফলের পুষ্টি উপাদানগুলো শুধু ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দূর করে না; এতে থাকা ভিটামিন এ স্কিন ভালো রাখে, ট্যান দূর করে, চোখের জ্যোতির উন্নতি ঘটায়, চুল পড়া কমায়। এককথায়, শরীরের সব অঙ্গের পুষ্টির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া তরমুজে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি খেলে দেহের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, প্রোস্টেট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার ও ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
 আঙুরের জুস: সবুজ, কালো ও লাল রঙের হালকা মিষ্টি ও টকের আঙুর আমাদের দেশে খুব সহজে মেলে। জ্যাম, জেলি তৈরিতে বেশি ব্যবহার হলেও আঙুরের জুসও এখন বেশ জনপ্রিয়। এটি যেমন টেস্টি, তেমনি হেলদি। এই রোজায় ইফতারে রাখতে পারেন পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে-সমৃদ্ধ এই ফল। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। ব্লাড ক্লটিং এবং বোন ডেনসিটি রক্ষার্থে ভিটামিন কে-র গুরুত্ব অনেক। আর সারা দিন রোজা রাখার পর যাদের ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালেন্স দেখা দেয়, তাদের ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষায়ও আঙুরের জুস খুব উপকারী।
 ডাবের পানি: ইলেকট্রোলাইটসে ভরপুর ডাবের পানি আমাদের হাইড্রেটেড ও সতেজ রাখতে ভীষণ কাজের। পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট রয়েছে এতে। এ ছাড়া অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকায় এই পানীয় ব্যাকটেরিয়াল গ্রোথ কমায়। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এই ডাবের পানি উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত হওয়ায় ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক এবং হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
স্যুপে স্বস্তি
খাদ্যতালিকায় আরও রাখা যেতে পারে ব্রথ, স্টু বা সুপ। সে ক্ষেত্রে বাইরের বা রেস্টুরেন্টের তুলনায় হোমমেড স্যুপ বেশি স্বাস্থ্যকর। বাসায় ঝটপট বানিয়ে নেওয়া সম্ভব।
 চিকেন স্যুপ: পরিমাণমতো লবণ দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করা মুরগির মাংস সেদ্ধ করে নিয়ে অল্প বাটার বা ভেজিটেবল অয়েলসহ আদা ও রসুনকুচি দিয়ে খুব সহজে তৈরি করা যায় হেলদি চিকেন স্যুপ। প্রোটিন-সমৃদ্ধ এই স্যুপে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাসের মতো পুষ্টি উপাদান। ইফতারিতে এটি গ্রহণে ডেইলি প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেহে পানির ঘাটতি পূরণেও কাজে দেবে।
 এগ-ভেজ স্যুপ: ডিহাইড্রেশন দূর করে শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে স্যুপ এমনিতেই বেশ উপকারী। হাইড্রেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। স্বাস্থ্যকর এই খাবার যদি হয় প্রোটিন-সমৃদ্ধ ডিম দিয়ে, তাহলে তো কথাই নেই! কপার, জিংক, আয়রনের মতো নানা প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান ছাড়াও এতে আছে ভিটামিন এ, বি৬, বি১২, ডি ইত্যাদি। আর সবজি মানেই ভিটামিন মিনারেলসের পাশাপাশি উচ্চ ফাইবার; সে ক্ষেত্রে এক বাটি ভেজিটেবল স্যুপ ইফতারিতে রাখলে প্রোটিন, ভিটামিন মিনারেলসের পাশাপাশি ফাইবার রিচ ডায়েট সহজে ইনক্লুড হয়ে যায়। এতে শরীরে প্রোটিনের চাহিদার অভাবের ঝুঁকি থাকে না। এ ছাড়া রোজায় যাদের কনস্টিপেশনের সমস্যা থাকে, তাদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের ডায়েট উপকারী।
 টমেটো স্যুপ: গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার সেলের গ্রোথ বন্ধ রাখতে টমেটোতে থাকা লাইকোপেন দারুণ ভূমিকা রাখে। শরীরকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পূর্ণ রাখতে টমেটো স্যুপ বেশ হেলদি চয়েস। যারা বাড়তি ক্যালরি মাথায় রেখে ডায়েট প্ল্যান করতে চান, তাদের জন্য এটি চমৎকার অপশন। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক তো বটেই; রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইলেকট্রোলাইটস ব্যালেন্সের জন্যও বেশ গ্রহণযোগ্য।
ডেটক্স ডিউটি
মিষ্টিজাতীয় খাবার অনেকে পছন্দ করেন না। কারও কারও পছন্দ হলেও স্বাস্থ্যগত কারণে তা গ্রহণ করতে মানা! সে ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন রিফ্রেশিং ডেটক্স ওয়াটার। বিভিন্ন ধরনের মেডিসিনাল ইফেক্ট-সমৃদ্ধ খাবারগুলো দিয়েই তৈরি করা সম্ভব। এ ধরনের পানীয় শরীরকে ডিটক্সিফাই করে, হাইড্রেট রাখে এবং ত্বক ও চুলকে নারিশ করতে সাহায্য করে।
 লেমন-মিন্ট ডেটক্স: শরীর চাঙা রাখতে ইফতারিতে গ্রহণ করতে পারেন পুদিনাপাতা ও লেবুর স্লাইস দিয়ে তৈরি ডেটক্স ওয়াটার। সারা দিনের পানির অভাব পূরণে এটি যেমন সহায়ক, তেমনি ভিটামিন সি যুক্ত হওয়ায় ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবেও কাজের।
 জিনজার-অ্যাপেল ডেটক্স: ২৫০ মিলিলিটার পানিতে এক ইঞ্চি জিনজার, অর্ধেক পরিমাণ গ্রিন আপেল, ইউব কাট কিছু লেমন-শসার স্লাইস দিয়ে সেহরিতে ভিজিয়ে রেখে ইফতারের সময় এটি গ্রহণ করা যেতে পারে। শরীরকে টক্সিক মুক্ত করতে বেশ উপকারী।
দূরত্বের গুরুত্ব
তবে শুধু ভালো ভালো খাদ্য উপাদান ইফতারিতে রাখলেই চলবে না, পানির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে কিছু খাবার ও পানীয়ের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখাও জরুরি।
চা, চকলেট কোকো, কিছু কিছু এনার্জি ড্রিংকস, ক্যাফেইনযুক্ত ওয়াটার ইত্যাদি খাদ্যতালিকা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া শ্রেয়। কেননা, এগুলোতে থাকা ক্যাফেইন আসলে ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে বলে বারবার ইউরিনেশনের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। তাতে শরীর সহজে অনেকটা পানিশূন্য হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে ইফতারিতে কম গ্রহণ করার সুযোগ থাকলেও সেহরিতে যাদের চা-কফি খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাদের সেই অভ্যাস ত্যাগ করাই স্বাস্থ্যসম্মত।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top