কুন্তলকাহন I মম কাট
মায়েদের জন্য। কিন্তু ট্রেন্ডিং টিনএজার থেকে সিনিয়র সিটিজেন—সবার কাছে। কারণটা কী
হবার কথা ছিল বোরিং। কিন্তু হয়ে উঠেছে হালের হটেস্ট ট্রেন্ড। লেটেস্ট এই শর্ট হেয়ার কাট অ্যাসিমেট্রিক ববের মতো নয় মোটেই। তার থেকে খানিকটা লম্বা, দেখতেও পরিপাটি। কথা হচ্ছে মম কাট নিয়ে। অনেকের কাছে মম চপ হিসেবেও পরিচিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মায়েদের কথা মাথায় রেখে এর শুরুয়াত হলেও এখন এই কাট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ্যে। আর সে জন্য মা যে হতেই হবে, সেই বাধ্যবাধকতাও কিন্তু নেই।
মম কাট কী
আদতে বব, তবে সামান্য লং স্টাইল। কাঁধ বরাবর কিংবা এর সামান্য ওপরে এসে শেষ হয় দৈর্ঘ্য। লো মেইনটেন্যান্স অর্থাৎ অনেক বেশি দেখভালের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু দারুণ প্র্যাকটিক্যাল, প্রতিদিনকার দৌড়ঝাঁপের ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে মানানসই। শোল্ডার লেন্থটাই বেশি জনপ্রিয়; তবে সাইজে সামান্য ছোট হলেও ক্ষতি নেই। অবশ্য ফেস ফ্রেমিং লেয়ার থাকতেই হবে।
জনপ্রিয়তার কারণ
গেল বছর পিনটারেস্টে মম কাটের খোঁজ বেড়ে যায় ৩৫০০ পারসেন্টের বেশি। টিকটকেও দারুণ ট্রেন্ডিং ছিল এটি ক্রিয়েটরদের কল্যাণে। রেডডিটের মতো সোশ্যাল ওয়েবসাইট ঘেঁটেও দেখা যায় মম কাটের জয়জয়কার। শিশু জন্ম দেওয়ার পরপরই অনেকে চুল কাটিয়ে নেন এই কাটে। কারণ, সামান্য কয়েক ইঞ্চি চুল কেটে ফেলার ফলে পোস্টপারটাম পিরিয়ডে চুল পড়া, নেতিয়ে থাকা আর পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যার সঙ্গে সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় যাদের অনেক চুল পড়ে গেছে, তাদের জন্য এ স্টাইল পারফেক্ট। কারণ, ছোট চুল বেশি ঘন দেখায়। লম্বা চুলে সুন্দর আকার দিতে অনেক বেশি স্টাইলিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ছোট চুলের প্যারিমিটার ছোট হওয়ায় একে যত্নে রাখা সহজ হয়, স্টাইলও ধরে রাখা যায় অনায়াসে। সম্প্রতি সেলিব্রিটিদের মধ্যে এ নিয়ে চর্চা দারুণ বেড়েছে। এমা স্টোন থেকে তারাজি পি হ্যানসন, সেলেনা গোমেজসহ অনেককে দেখা গেছে এ স্টাইলিংয়ে। স্টাইল ও প্র্যাকটিক্যালিটির চমৎকার মিশ্রণ বলেই বাড়ছে এর চাহিদা—বিশ্বাস ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। মডার্ন ইয়েট ক্ল্যাসিক। আর মানিয়েও যায় সহজে, যেকোনো বয়সীদের। তাই তো এর আকর্ষণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
স্যালনে সন্ধান
হেয়ার কাটের রেফারেন্স ফটো নিয়ে যাওয়া যেতে পারে স্যালনে। সেরা এবং সবচেয়ে সহজ উপায়। এর মাধ্যমে চুলের কাঙ্ক্ষিত দৈর্ঘ্য, স্টাইল আর লেয়ার কেমন হবে, তার জানান দেওয়া যায় হেয়ার স্টাইলিস্টকে। ছবি নেই? সে ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে লং বব এবং ব্লান্ট কাট মিলিয়ে কেটে দিতে; যা কলারবোন ছোঁয়া হতে পারে। অথবা কাঁধের সামান্য ওপরে থাকলেও মন্দ দেখাবে না। স্টাইলিস্টের একবার বোঝা হয়ে গেলে তারপর তিনি সবার আগে কাঙ্ক্ষিত দৈর্ঘ্যে কেটে নেবেন চুল। কতটা টেক্সচার আর লেয়ার চাই চুলে, সেটা বুঝে রিফাইন করে দেবেন কাট, ক্ষুর অথবা রেজরের সাহায্যে। পাতলা চুল ব্লান্ট কাটে ঘন দেখাবে।
কেমন চুলে মানায়
সৌভাগ্যক্রমে মম কাট সব ধরন ও টেক্সচারের চুলে মানিয়ে যায়। যাদের চুল পরিকল্পনা ছাড়াই বেড়ে উঠছে, তাদের জন্য চমৎকার ট্রানজিশনাল স্টাইল হতে পারে এটি। ভার্সাটাইল এ কাটে ইচ্ছেমতো টেক্সচার আর লেয়ার কাস্টমাইজ করার সুযোগ রয়েছে। পুরোটাই ব্যক্তি পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে। লুক কেমন চাই, তার ওপরও নির্ভর করবে স্টাইলিং। এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক হেয়ার টেক্সচারের ওপর খেয়াল করাও জরুরি। যাদের ঢেউ খেলানো অথবা কোঁকড়া চুল, তাদের চুলে লেয়ার যোগ করা হয় বেশি। পারফেক্ট শেপ ধরে রাখার জন্য। যাদের চুল পাতলা এবং সটান সোজা, তাদের ব্লান্ট কাটের ওপর বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন, ঘন দেখাতে। মম কাট সবচেয়ে ভালো দেখায় পাতলা, কম ঘন চুলে। কারণ, এর ফলে চুল ঘন দেখাবার ইলিউশন তৈরি হয় যে!
মেইনটেইন কাট
অনেক বেশি দেখভালের প্রয়োজন পড়ে না একদমই। প্রতি ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর সামান্য কেটে নিলেই বজায় থাকবে সৌন্দর্য। চুল কত দ্রুত বাড়ে, তার ওপর নির্ভর করবে কত দিন পরপর ট্রিম করতে হবে কাট সুন্দর রাখার জন্য।
স্টাইলিং সারতে
সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হচ্ছে, এই কাটে খুব বেশি স্টাইলিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না। ব্যস্ত মায়েদের জন্য একদম পারফেক্ট। কিন্তু হাতে যদি খানিকটা সময় থাকে, চুল সাজিয়ে নিতে ক্ষতি কি!
ট্যাসেলড লব স্টাইলিংয়ে চুলে বাড়তি মুভমেন্ট আর কোমলতা যোগ হয়। শ্যাগের মতো ক্ল্যাসিক দেখতে এ কাট। এয়ার ড্রায়িংয়ের মাধ্যমে চুলের ন্যাচারাল টেক্সচার আরও সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। দরকার শুধু স্টাইলিং ক্রিম আর টেক্সচারইজিং স্প্রে। শুধু সিঁথি করে ফ্ল্যাট আয়রন ব্যবহারে চুল সটান সোজা করে নিলেও চমৎকার দেখাবে। স্লিক ফিনিশ আসবে লুকে।
চেহারার ধরন বুঝে সিঁথি হতে পারে মাঝে বা সাইডে। চুল বেশি টেক্সচারড হলে কার্ল চুলের জন্য বিশেষভাবে তৈরি সব পণ্য ব্যবহারে স্টাইলিং সেরে নেওয়া যেতে পারে। ডিফিউজার ব্যবহার করা যায় এ ক্ষেত্রে। কার্লি লব স্টাইল লুকের জন্য। যাদের ব্যাঙসে দুর্বলতা রয়েছে, কার্টেন ব্যাঙস এ ক্ষেত্রে খুব কাজের। ফেস ফেমিং হওয়ায় মানিয়ে যায় সব ধরনের চেহারায় এবং চুলের সঙ্গে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: পুষ্পিতা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস