skip to Main Content

ফিচার I ঈদের বেলা নয় হেলা

এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিন মজার সব খাবার গ্রহণের ধুম পড়ে। তা পড়ুক! তবে স্বাস্থ্যের দিকটিও জায়গা নিক বিবেচনায়

দেহঘড়ি কিন্তু ঈদ-উৎসব বোঝে না। অন্য দিনের মতো এদিনও শরীরের পুষ্টির চাহিদা ও সংবেদন একই রকম থাকে। তবে দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর খাদ্য গ্রহণের রুটিনে একটি ধারাবাহিকতা চলে আসে। ঈদের দিন সেই রুটিন যায় ভেস্তে। তাই না বুঝে বেশি কিংবা কম খেয়ে ফেললে এদিন পড়তে হয় বিপদে। তা ছাড়া এদিন যেখানেই বেড়াতে যাওয়া হোক, কিছু না কিছু তো খেতেই হয়। আবার বাড়িতে মেহমান এলেও ভদ্রতার খাতিরে কিছু খাদ্য উদরে চালান করা লাগে। তাই ঈদের প্রতি বেলায় হিসাব কষে খাওয়া বেশ কঠিন। তবে শরীরের সঙ্গে জবরদস্তি চলে না। এ কারণে ঈদের দিনে প্রতি বেলায় খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা নিয়ম মানা চাই।
আবহাওয়া দেখে আঁচ করা যাচ্ছে, এবারের ঈদুল ফিতরের দিন হয়তো গরম পড়বে। হতে পারে বৃষ্টিও। সে ক্ষেত্রে প্রতি বেলার খাবার সাজানো চাই সেই নিরিখে।
ঈদের খাবার শুরু হয় সকাল থেকে। উদর সেদিন পায় নতুন অভিজ্ঞতা। কারণ, গত এক মাস পেট ওই সময়ে কোনো খাবার পায়নি। তাই সকাল সকাল খেতে হবে রয়েসয়ে। সকালের নাশতা যেন খুব সাধারণ ও সহজপাচ্য হয়, সেদিকে নজর দেওয়া শ্রেয়। প্লেইন রুটির সঙ্গে সবজি কিংবা পরিমিত সেমাই খেলে ভালো। নেওয়া যেতে পারে পায়েসও। যারা স্থূলতায় ভুগছেন কিংবা ডায়েট মেইনটেইন করছেন, তারা সেমাই ও পায়েস খেলেও বাদ দেওয়া চাই রুটি। কেননা ওই দুই মিষ্টান্নেই আছে শর্করা। এর আধঘণ্টা পর যেকোনো একটি ফল অথবা ফলের স্যালাদ খাওয়া যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণে সতর্ক থাকা চাই।
ঈদের দিন অনুরোধের ঢেঁকি গেলার মতো অনেক খাবার খেতে হয়। তাই সকাল ও দুপুরের মাঝেও কিছু খেয়ে থাকেন উৎসবমুখর মানুষ। অনেকে এ সময় হালকা খাবার খেতে পছন্দ করেন। এ বেলায় ফুচকা-চটপটি মোক্ষম। তবে যেহেতু দাবদাহের আশঙ্কা রয়েছে, তাই এসব খাবার বাদ দিয়ে পুষ্টিকর কিছু, কিংবা তাজা ফলের জুস অথবা ফলের স্যালাদ খেলে ভালো। পান করা যেতে পারে বেলের শরবত, ডাবের পানি, তরমুজের শরবতও। এতে শরীরে পানিস্বল্পতা তৈরি হবে না।
নানা ব্যস্ততার কারণে ঈদের দুপুরে সময়মতো খাবার খাওয়া হয় না অনেকের। বিশেষ করে বাড়ির নারীদের। অন্যদিকে তরুণ-তরুণীরাও ঘোরাঘুরি ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে ঘড়ির দিকে তাকাতে ভুলে যান! ঈদের দিন খাবারের সময়ের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। ডায়াবেটিস রোগী হলে তো অবশ্যই সময়মতো খাবার খাওয়া চাই। তবে অন্যদের বেলায়ও একই কথা। দুপুরের খাবার শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঈদের মধ্যাহ্নে বেশি তেল-চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়াই মঙ্গল। ভাত, পোলাও অথবা বিরিয়ানি—যেটাই হোক, খেতে হবে পরিমিত। মাংস যেকোনো এক ধরনের খাওয়াই ভালো। সঙ্গে যেকোনো সবজি ও স্যালাদ রাখা উত্তম। স্যালাদে টক দই ব্যবহার করলে খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হবে।
বিকেলে হালকা কিছু খাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অল্প ফুচকাযোগে চটপটি হলে জমবে। তবে রাতে হালকা খাবার খেলে পরের দিন শরীরে ভালো অনুভূতি হবে। কেননা ঈদের আমেজে সারা দিন ঘোরাঘুরির পর রাতে শরীরজুড়ে নেমে আসে ক্লান্তি। তাই রাতের মেনুতে পেট ভরার পাশাপাশি ক্লান্তি হরা পদও রাখা চাই। এ জন্য ভাত ও রুটির সঙ্গে যেকোনো একটি তরকারি নেওয়া যেতে পারে। পরিমিত মাংস খেলেও খুব একটা ক্ষতি নেই। সঙ্গে একটি টক ফল, ব্যস।
উল্লিখিত সতর্কতাগুলো সবার বেলায় না-ও খাটতে পারে। কারণ, প্রত্যেকের শরীরের গঠন অভিন্ন নয়। কিছু কিছু মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত। তাই তাদের খাবার মেনু হওয়া চাই আলাদা। যার যে খাবারে বারণ, তাকে সেই নির্দেশনা মেনেই ঈদের দিন ভোজনবিলাসে মেতে উঠতে হবে। খেয়াল রাখা চাই খাবারের পরিমাণ আর ধরনেও।
ঈদের দিন বেশ গরম পড়লে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকা দরকার। পর্যাপ্ত পানি, ফলের বিশুদ্ধ জুস বা ডাবের পানি পান করলে নিরাপদ থাকা সম্ভব। তবে শরীরের অবস্থা বুঝে খাওয়া চাই। রোজার পর অনেকের হজমে সমস্যা হয়। সেদিকে খেয়াল রেখে খেতে হবে ঈদের খাবার।
দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত রোগীরা উৎসবের দিনে খাবার নিয়ে বেশ সংশয়ে থাকেন। দুই-এক দিন বেশি খেতে খুব একটা অসুবিধা হয়তো নেই, তবু জিভের লাগাম টেনে ধরা ভালো। যাদের পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগ রয়েছে, অথবা এসব রোগের লক্ষণ আছে, তাদের বেশ সতর্ক থাকতে হবে। কম-বেশি খাওয়ার আগে অবশ্যই ভাবনাচিন্তা করা শ্রেয়।
অনেকের পেটে তেল-চর্বি হজম হয় না। ঈদ উৎসবে মাংস একটু বেশিই খাওয়া পড়ে। এতে পেট ফাঁপার ঝুঁকি তৈরি হয়। এমনকি বেশি খাওয়ার কারণে পেট জ্বালাপোড়া ও ব্যথা করতে পারে। হতে পারে পেট খারাপও। তাই ঈদে খেতে হবে সাবধানে।
কম খাওয়ার জন্য কিছু কৌশল খাটানো হতে পারে। তাই ঈদের আগেই খাবার নিয়ে থাকা চাই সূক্ষ্ম পরিকল্পনা। দুপুরের পরপর মাংস খাওয়া পড়ে বেশি। তাই এই বেলার আগে কম খাবার খাওয়াই ভালো।
ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে অল্প করে মিষ্টান্ন খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গে কিশমিশ ও বাদাম খেলে ভালো। সকাল সকাল উঠে কিছু খেয়ে আধঘণ্টা পর দেড় থেকে দুই গ্লাস পানি পান করে নামাজে গেলে বিষয়টা স্বাস্থ্যসম্মত হবে।
ঈদের দিন দুগ্ধজাত খাবার তৈরি হয় বেশি। তাই যাদের আইবিএস আছে, তাদের এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলাই উত্তম। এ ছাড়া উৎসবের রাতে খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর ঘুমাতে যাওয়া ভালো।
মাংস খেলে যাদের খুব বেশি সমস্যা, তারা টাটকা সবজির বাহারি পদ দিয়ে সাজাতে পারেন ঈদের মেনু। তবে মাংস যদি খেতেই হয়, তবে তেল-ঘিয়ের পরিমাণ যত কম, তত মঙ্গল। ভুনার বদলে কাবাব করে খাওয়া উত্তম। এদিন কোমল পানীয় ও মিষ্টি কম খাওয়ার চেষ্টা করা চাই।
 আহমেদ সজিব
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top