skip to Main Content
techsohi-beauty-april-into

টেকসহি I সেকেন্ডহ্যান্ডই সেরা?

যদিও মূলধারার সৌন্দর্যনীতির বরখেলাপ বলা চলে একে। কিন্তু পাল্টে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গিতে বদলাতে শুরু করেছে পরিস্থিতি

আলমিরা খুলতেই মিলছে দু-একটা থ্রিফটেড পোশাক। বেশির ভাগ মানুষের কাছে ব্যাপারটা এখন স্বাভাবিক। বিষয়টা সংখ্যাগরিষ্ঠতার শামিল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন থ্রিফট স্টোর থ্রেডআপ, যারা অ্যাপারেল, জুতা আর অনুষঙ্গ কেনাবেচা করে। তাদের চালানো এক সমীক্ষা বলছে, গেল বছর প্রায় ৫২ শতাংশ আমেরিকান সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক কিনেছে। অর্থাৎ তিনজনের মধ্যে অন্তত একজনকে এমন ক্যাটাগরির পোশাক শপিং করতে দেখা গেছে। কিন্তু এর ঠিক উল্টো চিত্র সেকেন্ডহ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে। গুটি কয়েক মানুষ মিলবে, যারা এ ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত, এমন পরিস্থিতি বেশি দিন থাকবে না।
বহু বছর ধরে মাল্টিবিলিয়ন ডলারের বিউটি ইন্ডাস্ট্রি সেকেন্ডহ্যান্ড বাজারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে আসছে। তবে ভোক্তাদের মাঝে পরিবেশ-সচেতনতা বেড়েছে। তারা বুঝতে পারছেন, তাদের সৌন্দর্য চাহিদা এবং ভোগের অভ্যাস পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে। তারপরও ফ্যাশনের ক্ষেত্রে থ্রিফটিং যেমন জনপ্রিয়, সৌন্দর্যপণ্যের ক্ষেত্রে তা ক্রোশ দূরে। এই নীতিতে এখনো বিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারছেন না ক্রেতারা। মেকআপ, ময়শ্চারাইজার, পারফিউম আর শ্যাম্পু এখন পার্সোনাল কেয়ার প্রোডাক্ট হিসেবে বিবেচ্য। যেখানে পার্সোনাল ব্যাপারটা এখনো দারুণ গুরুত্ববহ। তাই তো শেড ম্যাচ না হওয়ায় ড্রয়ারের এক কোণে পড়ে থাকা ফাউন্ডেশন বিক্রি করে দেওয়া কিংবা প্রি-ওউনড ডিজাইনার পারফিউম কেনার ক্ষেত্রে এখনো স্বচ্ছন্দ নন অনেকে। অনেকের কাছে ব্যাপারটা অস্বাস্থ্যকর, অরুচিকর। কিন্তু তাতে ধীরগতিতে হলেও পরিবর্তন আসছে। ই-কমার্স স্পেসের ‘নেক্সট বিগ থিং’ বলা হচ্ছে একে। সেকেন্ডহ্যান্ড প্রোডাক্টের গ্লোবাল মার্কেটপ্লেস মার্কারির সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, গেল বছরের ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং রিসেল ক্যাটাগরির শীর্ষ পাঁচের মধ্যে সৌন্দর্যপণ্যে নাম রয়েছে। ২০৩১ এর মধ্যে যা ১২৬ শতাংশ অব্দি বাড়বে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
সেকেন্ডহ্যান্ডের মূল চালিকা শক্তি
ফ্যাশনের মতোই, লাক্সারি বিউটি প্রোডাক্টের বিপুল চাহিদা রয়েছে ভোক্তাদের মাঝে। আর সেটা যদি সেকেন্ডহ্যান্ড কেনা যায়, তাহলে টাকা তো বাঁচবেই, কম খরচে বিউটি বক্সে যোগ হবে ডিজাইনার লেবেল। ইদানীং অনেক সৌন্দর্যসচেতনকেই প্রতিদিন সেকেন্ডহ্যান্ড সাইট এবং গ্রুপগুলো ঢুঁ মারতে দেখা যায়। শুধু ডিজাইনার বিউটি ইনভেনটরির খোঁজে। অনেকে আবার পেয়েও যান কাঙ্ক্ষিত পণ্য। কখনো কখনো একদম অব্যবহৃত অবস্থায়, কিন্তু অনেক কম দামে। শ্যানেল, ডিওর, ল্যানকমের মতো টপ সেলিং ব্র্যান্ডগুলোর প্রোডাক্টও বিকোয় পানির দরে। যাদের কাছে প্রোডাক্টের পারফরম্যান্সের চেয়ে ব্র্যান্ড ভ্যালু বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাদের জন্য সেকেন্ডহ্যান্ড প্রোডাক্টের এই সাইটগুলো সোনার খনির চেয়ে কম নয়। অনেকে এখন সৌন্দর্যপণ্য নিয়ে চলে আসা বছর পুরোনো চর্চার সঙ্গে আপোস করতে রাজি, শুধু একটা ডিজাইনার ব্লাশ অথবা আইশ্যাডো প্যালেট নিজের কালেকশনে যোগের জন্য।

বিদেশে এমন সাইটগুলো থেকে বিকিকিনি হয় দেদার। গ্ল্যামবট, ডিপপ, গ্লো বিউটি, মারকারি, পশমার্কের মতো সাইটগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয়। যেখানে কেনাবেচা হয় হাই এন্ড থেকে ড্রাগ স্টোর বিউটি প্রোডাক্ট। একদম নতুন মোড়কে মোড়ানো থেকে সামান্য ব্যবহার করা। স্যাম্পল, মিনি, ফুলসাইজ—মেলে সব ধরনের বিউটি প্রোডাক্ট। দেশের বাজারে এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় কিছু ফেসবুক গ্রুপ। সেল ইওর আনলাভড মেকআপ, সেকেন্ডহ্যান্ড বিউটিসহ এমন অনেক গ্রুপে চলে সৌন্দর্যপণ্যের বেচাকেনা। এ ছাড়া ইনফ্লুয়েন্সার কালচার আর মাইক্রো ট্রেন্ড মুভমেন্টও সেকেন্ডহ্যান্ড বিউটির প্রতি ঝোঁক বাড়াচ্ছে। পছন্দের ইউটিউবার বা টিকটকারের উল্লেখ করা কোনো বিউটি প্রোডাক্টের জন্য স্বভাবতই আগ্রহী হতে দেখা যায় ফলোয়ারদের। কিন্তু অনেক দাম দিয়ে সেসব কিনতে অনেকে নারাজ। সেকেন্ডহ্যান্ডই তখন ভরসা, সামান্য ব্যবহৃত হলেও কম দামে অরিজিনাল পণ্য তখন পাওয়া যায় হাতের নাগালে।
উৎসে উৎসাহ
সাবস্ক্রিপশন বক্স কাস্টমাররা এই বাজারের অন্যতম উৎস। বার্চবক্স আর ইপসির মতো সেবা থেকে প্রাপ্ত এ বক্সগুলো রিসেল মার্কেটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে হট কেকের মতো। দোকান বা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সুবাদেও অনেক সময় মিলে যায় সেকেন্ডহ্যান্ড মার্চেন্ডাইজ। এ ছাড়া বিউটি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরও সেকেন্ডহ্যান্ড মার্কেটে বিকিকিনি করতে দেখা যায়। মেকআপ আর্টিস্ট আর ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে প্রচুর পিআর প্রোডাক্ট এবং স্যাম্পল জমা হয়। যেগুলো পরে তালিকাভুক্ত করে দেওয়া হয় সেকেন্ডহ্যান্ড বিউটি মার্কেটে।
সেকেন্ডহ্যান্ডে সমস্যা
জীবাণুর সংক্রমণ আর ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা। ব্যবহার করা খোলা পণ্য বাতাসের অথবা অন্যের ত্বকের সংস্পর্শে আসে; যা জীবাণু ও ফাঙ্গাসের আক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়। এ ছাড়া প্রোডাক্ট ব্র্যান্ড নিউ দেখালেও ফর্মুলা মেয়াদোত্তীর্ণ হতে পারে। অনেক ডার্মাটোলজিস্ট তাই কোনোভাবেই সেকেন্ডহ্যান্ড মেকআপ ব্যবহারের অনুমোদন দেন না।
কেনার আগে সচেতনতা
ডার্মাটোলজিস্ট অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় বেছে নেওয়া যেতে পারে সেকেন্ডহ্যান্ড মেকআপ প্রোডাক্ট। প্রথমত, লিকুইড আর ক্রিমি প্রোডাক্ট এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এগুলোতে ময়শ্চার কনটেন্ট বেশি থাকায় ক্ষতিকর জীবাণু আর ফাঙ্গাস সৃষ্টির জন্য জুতসই পরিবেশ তৈরি হয়। কনসিলার, ক্রিম আইশ্যাডো, লিপস্টিক, লিপ গ্লস স্যানিটাইজ করার কোনো সহজ উপায় নেই। তাই এগুলো সেকেন্ডহ্যান্ড কেনায় ঝুঁকি বেশি। তার চেয়ে বরং পাউডার বেসড আইশ্যাডো, ব্লাশ, ফাউন্ডেশন সেকেন্ডহ্যান্ড কেনা বেশি নিরাপদ। অ্যালকোহল স্প্রে দিয়ে এগুলোকে স্যানিটাইজ করা সহজ। পেনসিল প্রোডাক্ট তো শার্প করে নিলেই আউটার লেয়ার উঠে যাবে। দেখাবে নতুন। তারপর অ্যালকোহল দিয়ে আরেকবার স্যানিটাইজও করে নেওয়া যায়।
দ্বিতীয়ত, ক্লিন বিউটি প্রোডাক্টের ব্যাপারে সাবধান। এগুলো অল ন্যাচারাল অথবা প্ল্যান্ট বেসড হয়ে থাকে এবং বাড়তি প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় না বলে সেলফ লাইফ প্রচলিত পণ্যের তুলনায় অনেক কম। তাই টেক্সচার, রঙে বা গন্ধে পরিবর্তন দেখলে সেটা না কেনাই ভালো।
তৃতীয়ত, প্যাকেজিং ভালো করে দেখে নেওয়া প্রয়োজন। লেবেলিংয়ে অন্য কোনো পরিচিত ব্র্যান্ডের লোগো, ফন্ট বা ছবির ব্যবহার থাকলে বুঝতে হবে, কোনো ঘাপলা আছে। সেটা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো হবে।

 জাহেরা শিরীন
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top