skip to Main Content

কুন্তলকাহন I স্ক্যাল্প সেরাম

চুলের জন্য নয়, এর উপযোগিতার পুরোটা মাথার ত্বকের যত্নে। সুস্থ চুলের সূত্র তো সেখান থেকেই

ত্বকের যতটা খেয়াল রাখার প্রয়োজন, স্ক্যাল্পও ঠিক তেমনি। দূষণ, ব্যাকটেরিয়া, হরমোনের অস্বাভাবিকতা আর শুষ্কতা—এগুলো সবই স্ক্যাল্পে নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে। কিন্তু প্রায়শই মুখের ত্বকযত্নে বেশি সময় দেওয়ায় স্ক্যাল্পে নজর দিতে ভুলে যান অনেকে। তবে এই ভুল শোধরানোর জন্যই আজকাল ডার্মাটোলজিস্টরা স্ক্যাল্প কেয়ার নিয়ে কথা বলছেন। এর জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি মেনে চলতে হয়। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্ক্যাল্প সেরাম ব্যবহার। এটি এমন প্রোডাক্ট, যা বিশেষভাবে স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে; পাশাপাশি স্ক্যাল্পের নানা সমস্যা থেকে মুক্তিতে কাজ করে।
স্ক্যাল্প সেরাম একটি তরল বা লিকুইড, যা সাধারণত ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। এটি স্ক্যাল্পে গভীরভাবে প্রবেশ করে নানা সমস্যা সমাধান এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কিন্তু অনেক সময় স্ক্যাল্প সেরাম আর হেয়ার সেরামকে গুলিয়ে ফেলা হয়। আসলেই এ দুটির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। সাধারণত চুলের জন্য ব্যবহৃত সেরামের চেয়ে এটি আলাদা। কারণ, এটি শুধু চুলের গোড়ায় নজর না দিয়ে স্ক্যাল্পের ত্বক লক্ষ্য করেই কাজ করে। হেয়ার সেরাম মূলত চুলের তন্তুর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি চুলে উজ্জ্বলতা আনতে, ফ্রিজ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং চুলের ফেটে যাওয়া ডগা সারাইয়ের মতো সমস্যায় কার্যকর। হেয়ার সেরাম সাধারণত চুলের মাঝের অংশ থেকে নিচ পর্যন্ত মাখানো হয়। অন্যদিকে স্ক্যাল্প সেরাম চুলের তন্তুর পরিবর্তে স্ক্যাল্পের শুষ্কতা, চুল পড়া, খুশকির সমস্যা ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। স্ক্যাল্প সেরামের মূল লক্ষ্য স্ক্যাল্পকে হাইড্রেটেড রাখা এবং চুলের ফলিকলগুলোর বৃদ্ধিতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা। তাই হেয়ার সেরামের মতো স্ক্যাল্প সেরামের ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ।
হাইড্রেশন অ্যান্ড ময়শ্চার
শুষ্ক স্ক্যাল্পের কারণে চুল পড়া, খুশকি, রুক্ষ চুল এবং স্ক্যাল্পে অস্বস্তি হতে পারে। তবে স্ক্যাল্প সেরাম এ সব সমস্যা দূরে দারুণ কার্যকর। এটি এমন সব হাইড্রেটিং উপাদান দিয়ে তৈরি, যা স্ক্যাল্পকে নরম ও ময়শ্চারাইজ রাখে। যেমন অ্যালোভেরা, আরগান অয়েল, টি ট্রি অয়েল। স্ক্যাল্পে সঠিক হাইড্রেশন নয় শুধু, স্ক্যাল্পের কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত এবং চুলের স্বাস্থ্যও উন্নত করে।
খুশকি নিয়ন্ত্রণ
বিশেষ কিছু স্ক্যাল্প সেরাম এমনভাবে ডিজাইনকৃত, যাতে শুধু খুশকি দূর করা যায়। এতে থাকা উপাদানগুলো যেমন টি ট্রি অয়েল আর অ্যাপেল সিডার ভিনেগার স্ক্যাল্পের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখতে এবং খুশকি কমাতে দারুণ কার্যকর। খুশকি শুধু অস্বস্তির কারণই নয়; চুলের বৃদ্ধিতেও বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু নিয়মিত স্ক্যাল্প সেরাম ব্যবহার করলে খুশকি অনেকটা কমে যেতে পারে, আর স্ক্যাল্পও থাকে হাইড্রেটেড!
তেলে ভাব আয়ত্তে
স্ক্যাল্প সেরাম স্ক্যাল্পে ঠিক ততটুকু তেল উৎপাদনের পরিবেশ তৈরি করে, যতটা চুলের জন্য প্রয়োজন। যদি স্ক্যাল্পে প্রাকৃতিক তেলের উৎপাদন অতিরিক্ত হয়ে যায়, তাহলে জমে গিয়ে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে, এমনকি চুল পড়ার কারণও হয়। তবে সঠিক স্ক্যাল্প সেরাম ব্যবহার করলে তেলের ভারসাম্য বজায় রাখা যায় এবং স্ক্যাল্প থাকে সুস্থ!
চুলের বৃদ্ধিতে
স্ক্যাল্প সেরামে থাকা সক্রিয় উপাদান; যেমন বায়োটিন ও পেপটাইড চুলের ফলিকলগুলোর রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়, যা চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ঘন আর লম্বা চুল পেতে সঠিক পুষ্টি আর ভিটামিন প্রয়োজন। স্ক্যাল্প সেরাম ঠিক তেমন পুষ্টি সরবরাহ করে, যা চুলের সঠিক বৃদ্ধি এবং চুল পড়া কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সুস্থ স্ক্যাল্প
নিয়মিত স্ক্যাল্প সেরাম ব্যবহার করলে স্ক্যাল্পের সাধারণ স্বাস্থ্য অনেক উন্নত হয়। এটি মাথার ত্বক পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া স্ক্যাল্প সেরাম খুশকি, শুষ্কতা এবং চুল পড়ার মতো সমস্যা সমাধানেও বেশ কার্যকর।
স্ক্যাল্প সেরাম ব্যবহারের আগে জেনে নেওয়া যাক এর খুঁটিনাটি এবং ব্যবহারের ধাপগুলো:
সেরাম সিলেকশন
বাজারে নানা ধরনের স্ক্যাল্প সেরাম পাওয়া যায় এবং প্রতিটির কাজ আলাদা। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি সেরাম সাধারণত বেশি ব্যবহৃত হয়, যেমন:
 রিজুভিনেটিং: যা স্ক্যাল্পের সাধারণ স্বাস্থ্য ও শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
 এক্সফোলিয়েটিং: যা স্ক্যাল্পে জমে থাকা মৃত কোষ ও ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
 অয়েল-রেগুলেটিং: স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত তেল উৎপাদনের রাশ টেনে ধরে।
 ড্যানড্রাফ: খুশকি দূর করতে দারুণ উপকারী।
 হাইড্রেটিং: শুষ্ক স্ক্যাল্পের জন্য আদর্শ।
 হেয়ার গ্রোথ: চুলের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করতে সহায়ক।
স্ক্যাল্পের ধরন বা সমস্যা অনুযায়ী, এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি সেরাম বেছে নেওয়া যেতে পারে।
ক্লিনজিং
স্ক্যাল্প সেরাম ব্যবহারের পূর্বশর্ত চুল ও স্ক্যাল্প ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া। এর জন্য একটি হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে; যা স্ক্যাল্পের ময়লা, তেল এবং জমে থাকা যেকোনো ধরনের প্রোডাক্ট বিল্ডআপ দূর করতে সাহায্য করবে। তবে খুব বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত নয়; কারণ, এটি স্ক্যাল্পকে অতিরিক্ত শুষ্ক করে দিতে পারে।
ড্রায়িং
শ্যাম্পু করার পর চুলের অতিরিক্ত পানি শুষে নিতে তোয়ালে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, সেরাম ব্যবহারের আগে চুল একেবারে শুকিয়ে নেওয়া যাবে না। তাই নরম তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে নেওয়া যায়। এতে স্ক্যাল্পে সেরাম মাখানো সহজ হবে এবং খুব সহজে সেরাম পুরো স্ক্যাল্পে ছড়িয়ে পড়বে।
অ্যাপ্লিকেশন
স্ক্যাল্প সেরাম পুরো স্ক্যাল্পে ব্যবহার করা উচিত; তবে কিছু বিশেষ অংশে একটু বেশি মনোযোগ জরুরি। যেমন স্ক্যাল্পের যেসব জায়গায় শুষ্ক বা চুল বেশি পড়ে, সেখানে সেরাম ভালোভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখা চাই। সেরাম হাতে নিয়ে আঙুলের সাহায্যে প্রয়োগ করা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
মাসাজ
সেরাম লাগানোর সময় আঙুল দিয়ে হালকা সার্কুলার মোশনে স্ক্যাল্পে মাসাজ করা যেতে পারে। এর ফলে স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়ে এবং সেরাম আরও ভালোভাবে কাজ করে। এ ছাড়া এটি স্ক্যাল্পের যেকোনো অস্বস্তি কমাতে সহায়ক এবং পুরো স্ক্যাল্পে দ্রুত পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে।
লিভ ইট ইন
স্ক্যাল্প সেরাম সাধারণত ধুয়ে ফেলতে হয় না। স্ক্যাল্পে রেখে দিয়ে একে এর কাজ করার যথেষ্ট সময় দেওয়া প্রয়োজন। তাই নিজ সুবিধামতো সকালে, রাতে বা যেকোনো সময় ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্টাইলিং
স্ক্যাল্প সেরাম ব্যবহারের পর সাধারণভাবে চুল স্টাইল করা যেতে পারে। তবে যেকোনো ধরনের হিট স্টাইলিং যেমন স্ট্রেইটেনিং বা কার্লিং এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ, এগুলো চুল ও স্ক্যাল্পের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই সময়ে হালকা স্টাইলিং করা বেশি উপযোগী।
স্ক্যাল্প সেরাম ব্যবহারের মাত্রা চুলের ধরন, চুল বা স্ক্যাল্পের সমস্যা এবং সেরামের ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু সেরাম প্রতিদিন ব্যবহার করা যেতে পারে, আবার কোনোটা সপ্তাহে দু-তিন দিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই পণ্যটির গায়ের নির্দেশনা দেখে ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
স্ক্যাল্প সেরাম ব্যবহারে কিছু সাধারণ ভুল এড়িয়ে চলা জরুরি—
 বেশি সেরাম ব্যবহার করলে চুল ভারী ও তেলতেলে মনে হতে পারে, যা স্ক্যাল্পের জন্য অস্বস্তিকর। এ ছাড়া অতিরিক্ত সেরাম স্ক্যাল্পে দুর্গন্ধ এবং অতিরিক্ত তেল জমে যাওয়ার কারণও হতে পারে।
 স্ক্যাল্পের সমস্যা অনুযায়ী সঠিক সেরাম নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। ভুল সেরাম ব্যবহার করলে তা সমস্যা আরও বাড়াতে পারে। যেমন শুষ্ক স্ক্যাল্পের জন্য অয়েল বেসড সেরাম এবং তৈলাক্ত স্ক্যাল্পের জন্য লাইট সেরাম বেছে নেওয়া যেতে পারে।
 প্রতিটি পণ্যই নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করা শ্রেয়। সেরামের নির্দেশনা ঠিকমতো না মানলে তা স্ক্যাল্প ও চুলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এ ধরনের সেরাম স্ক্যাল্প ও চুলের সেরা বন্ধু হয়ে উঠতে পারে, যদি সঠিকভাবে নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষা এবং দ্রুত বেড়ে ওঠার জন্য স্ক্যাল্পে সঠিক হাইড্রেশন ও পুষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজন, আর স্ক্যাল্প সেরাম এই পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করতে পারে। সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ করলে নিয়মিত ব্যবহারে খুব দ্রুত চুল ও স্ক্যাল্পের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

 শিরীন অন্যা
মডেল: মাইশা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সালেক বিন তাহের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top