ফরহিম I ক্লান্তি হরা
অপর্যাপ্ত ঘুম, পানিশূন্যতা, চৈত্রের প্রখর তাপ। এত সবের মাঝেও উৎসব বরণ। তনু-মন চনমনে রাখতে চাই সহজ সমীকরণ
জীবনযাপনের পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে শরীরে। মনেও পৌঁছায় ক্লান্তির খবর। এসব সারাইয়ের জন্য আলাদা করে ডাক্তারবাড়ি দৌড়াতে হবে এমন নয়। অল্প কিছু সহজ যত্নেও হতে পারে সমাধান। ব্যস্ত শহরের মানুষ মানেই পায়ের তলায় সর্ষে। ছুটছে তো ছুটছে। সেই সঙ্গে আছে খাবারের মেনু পরিবর্তন, সময় আর ঘুমের অভাব। সব মিলিয়ে তাই জেঁকে বসে ক্লান্তি। কাটিয়ে ওঠার জন্যও নেই অবসর। তার আগেই হাজির দাওয়াতনামা। এ বেলা এখানে তো সে বেলা সেখানে। এসবের মাঝে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে চেষ্টা যাদের, তারা আগে থেকে গুছিয়ে নিতে পারেন খানিকটা।
শীতল পানির স্পর্শে দীর্ঘ সময়ের ক্লান্তি দূর হয়। ওয়াটার স্প্ল্যাশ এখানে ওয়ান্ডার মান্ত্রা। চোখের ক্লান্তি ঢাকতেও করা যেতে পারে এর ব্যবহার। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠেও যদি মনে হয়, চোখ ভারী হয়ে আছে; তাহলে ফ্রিজে থাকা আইস ট্রে থেকে এক টুকরো বরফ তুলে নিয়ে ফ্লানেলের কাপড়ে জড়িয়ে আই এরিয়ায় বুলিয়ে নিলে কমে আসবে এই ফোলা ভাব। কোল্ড কম্প্রেস রক্ত চলাচলের নালি সংকুচিত করে। অল্প সময়ের জন্য এটি হতে পারে কার্যকরী সমাধান।
আর পার্মানেন্ট সল্যুশন চাইলে নাইট ক্রিমে রাখা যেতে পারে আস্থা। কিন্তু যেকোনোটা কিনলেই চলবে এমনটা নয়। কেনার সময় থাকতে হবে সচেতন। উপকরণ দেখতে হবে মনোযোগ দিয়ে। পেপটাইড, ভিটামিন সি এবং কম শক্তিশালী রেটিনল থাকলে ক্রিমটি ব্যবহারে ত্বক ভালো থাকবে। এসপিএফেও সতর্কতা প্রয়োজন। দিনের বেলায় আই ক্রিম ব্যবহার করতে চাইলে এই উপাদানের উপস্থিতি আবশ্যক। আর উৎসবের ঠিক আগের দিন জলদি সমাধান চাইলে ব্যবহার করতে হবে প্যাচ। রেটিনলের উপস্থিতি আছে এমন আই প্যাচে চোখের ক্লান্তি তুড়িতে উড়ে যাবে।
চোখে যদি থাকে ডার্ক সার্কেল, তাহলে চাঁদের কলঙ্কের মতোই নজরে পড়বে অন্যদের। কম ঘুম হলে অনেকের চোখজুড়ে এমন কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যায়। এটি সরাতে কনসিলার হতে পারে সমাধান। গুড নাইট স্লিপকে চিট করতে চাইলে নিজের ত্বকের থেকে এক শেড উজ্জ্বল কনসিলার বেছে নিতে হবে।
এলইডি মাস্কের চাহিদা বেড়েছে দারুণভাবে। সেই করোনাকাল থেকে শুরু। এই অ্যাট হোম বিউটি ডিভাইসটিতে ছোট অনেক বাল্ব থাকে। যেগুলো থেকে বিভিন্ন তরঙ্গ রশ্মি ত্বকের কোষ উদ্দীপিত করে। এতে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। দিনে তিন মিনিট ব্যবহার করলে চোখের ত্বক উপকৃত হয় বলে জানা যায়।
শুধু ঘুমেও পাওয়া যেতে পারে সমাধান। কীভাবে? উৎসবের আগের দিন অন্তত আট ঘণ্টা একটানা ঘুমিয়ে নিন। তাহলে চোখের ক্লান্তি বেশ খানিকটা কমে আসবে। শ্রান্ত দেহ শান্তি পাবে। ত্বক পর্যাপ্ত আর্দ্রতা পাবে। যার প্রভাব পড়বে চোখেও। পাফিনেস কমার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসবে লাল ভাব। চোখের ড্রাইনেসও পালাবে।
প্রাণবন্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত খাবারের বিকল্প নেই। ওমেগা থ্রি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন স্যামন, আখরোট দারুণ কার্যকর। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারও জরুরি। যেমন বেরি ও গ্রিন টি। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে এগুলো।
ত্বক মলিন মনে হলে ব্যবহার করা যেতে পারে টোনার অথবা রোজ ওয়াটার। এতে ইনস্ট্যান্ট ফ্রেশনেস ফিরে আসবে। সেরাম ব্যবহার করতে চাইলে চাহিদা বুঝে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো। কারণ, চাহিদা অনুযায়ী সেরাম ব্যবহারেই পাওয়া যেতে পারে সমাধান। ভিটামিন সি সেরামে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে অল্প সময়ে। নিয়াসিনামাইডের ব্যবহার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ভূমিকা রাখে। স্কিন টোনও লাইট করতে কার্যকর বলে জানা যায়। নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার খুব জরুরি। নয়তো ত্বকের ক্লান্ত ভাব ভোগাতে পারে দীর্ঘদিন। ফেস অয়েল অথবা ময়শ্চারাইজার তাই ডেইলি রুটিনে মাস্ট। কারণ, রক্ত চলাচল এতে বাড়ে। এ তো গেল চটজলদি সমাধান। এর বাইরে সময় নিয়ে এই সমস্যার নিষ্পত্তি চাইলে প্রযুক্তির আশীর্বাদ খুঁজতে হবে।
আধুনিক সমাধানের মধ্যে মেসোথেরাপি একটি। সুই ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হয় এটি। খুব দ্রুত উধাও করে দিতে পারে চোখের কালো দাগ। নিডলের মাধ্যমে ভিটামিন, মিনারেলস এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া হয় ত্বকের গভীরে। আর্দ্রতা বাড়ায়। কোলাজেনকে উদ্দীপ্ত করে। ত্বকের ক্লান্ত ভাবকে দূর করতে ভূমিকা রাখে। এটি ছাড়া আরও পদ্ধতি রয়েছে। নিউক্লেয়াডাইন এর মধ্যে অন্যতম। এটি একধরনের পলিনিউক্লিওটাইড, যার রক্তনালির কার্যকারিতা ত্বরান্বিত করার ক্ষমতা আছে। কোলাজেনের উৎপাদনও বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ত্বকের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সজীব হয়।
সারাহ্ দীনা
মডেল: ইলিয়াস
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল