skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I কোলাজেন কই

সে তো কমতে শুরু করেছে বয়স বিশে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে; প্রতিবছর ১ শতাংশ হারে। সংরক্ষণের উপায় না জানলে কিন্তু বিপদ

কোলাজেন হচ্ছে একধরনের প্রোটিন; যার কাজ ত্বক, চুল, নখ এবং কানেকটিভ টিস্যুর গঠনগত কাঠামো তৈরি। সেই সঙ্গে ত্বকের গড়ন, স্থিতিস্থাপকতা আর শক্তি প্রদানেও সচেষ্ট। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, দেহের প্রাকৃতিক কোলাজেন উৎপাদনের হার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। কারণ, সূর্যালোকে উন্মোচন, দূষণ, ধূমপান আর কমজোর খাদ্যাভ্যাস। এগুলোর ফলে কোলাজেন ভাঙতে শুরু করে। কম পরিপুষ্ট দেখায় ত্বক, সঙ্গে কমে আসে স্থিতিস্থাপকতা। দেখা দেয় বলিরেখা, সূক্ষ্মরেখা আর ঝুলে যাওয়ার মতো ত্বক সমস্যা।
কোলাজেন একবার নষ্ট অথবা খোয়া গেলে তার পুনরুদ্ধার কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। তার চেয়ে বরং সংরক্ষণ সহজ। ত্বক তারুণ্যোজ্জ্বল ও সুস্থ রাখতে। ডার্মাটোলজিস্ট অ্যাপ্রুভড দশ ধরনের উপায় আছে এ ক্ষেত্রে।
কোলাজেনযুক্ত ময়শ্চারাইজার মাস্ট
ত্বকে আর্দ্রতা জোগানোর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা স্তরের ক্ষতি সারাইয়ে সহায়তা করে। কিন্তু সঠিক পণ্যের প্রয়োগ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি। কোলাজেনের মলিকিউল প্রাকৃতিকভাবেই বেশ খানিকটা বড় হয়ে থাকে। ফলে ত্বকের খুব গভীরে এর প্রবেশের সুযোগ নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের মত, কোনো কোনো তত্ত্ব মোতাবেক ত্বকে কোলাজেন মাখার ফলে দেহ এটি নতুন করে উৎপাদনের ক্ষমতা পায়। যেহেতু এটি ত্বকের জন্য সহায়ক উপাদান, যা টান টান অনুভূত করায়, তাই কোলাজেন উৎপাদন এবং এর ভেঙে যাওয়া রোধের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা খুবই জরুরি। মূলত কোলাজেন অক্ষুণ্ন রাখার ব্যাপারটিই এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু টপিক্যাল ক্রিম ব্যবহারে কোলাজেন উৎপাদনের হার বাড়ানোর কার্যকারিতা অজানা; তাই এমন ময়শ্চারাইজার খুঁজতে হবে, যা অন্তত কোলাজেন সংরক্ষণে সহায়ক। টপিক্যাল প্রয়োগে কোলাজেন সরবরাহের দাবি করা ক্রিমগুলোতে মন না ভোলানোই ভালো।
মাইক্রোনিডলিং ট্রিটমেন্ট
বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কোলাজেন স্টিমুলেটিং ট্রিটমেন্ট, যা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আঘাত দিয়ে করা হয় ত্বকে। এই ক্ষতগুলো দেহের প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করে, বাই প্রোডাক্ট হিসেবে কোলাজেন আর ইলাস্টিনের উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়। মাইক্রোনিডলিং স্কিন টেক্সচারকে উন্নত করে, বলিরেখা কমায়, ক্ষতের দাগ সারিয়ে তোলে। ট্রিটমেন্ট নেওয়ার সপ্তাহখানেক পর ফল দেখা দেয় ত্বকে। কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী মাসগুলোতে ত্বকের ক্রমাগত উন্নতি সাধিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মত, সেশনগুলো তাই নিয়ম মেনে সম্পন্ন করতে হবে; তবেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল।
রুটিনে রেটিনয়েড যোগ
রেটিনয়েড হচ্ছে ভিটামিন এ থেকে নির্যাসিত; যা পরে রেটিনয়িক অ্যাসিডে রূপান্তর করা হয়, টপিক্যাল ও ওরাল স্কিন কেয়ার ট্রিটমেন্ট হিসেবে। টপিক্যালি ব্যবহারে এটি কোলাজেন উৎপাদনের হারকে উদ্দীপ্ত করে। ত্বকের কোষের পুনর্গঠন ত্বরান্বিত হয়। এটা ত্বকে উপস্থিত কোলাজেনকে সংরক্ষণের পাশাপাশি নতুন কোলাজেন ফাইবার উৎপাদনে সহায়ক। ক্রিম অথবা সেরাম হিসেবে এর ব্যবহার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত।
লেজার ট্রিটমেন্ট
অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ তত্ত্বাবধানে লেজার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ত্বকের কোলাজেনের মান ও স্তর—দুই-ই উন্নত করা সম্ভব। লেজার ব্যবহারে ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়ে। সঙ্গে টেক্সচার আর টোনেও দেখা দেয় আমূল পরিবর্তন। ফ্র্যাকশনাল ও নন-অ্যাবলেটিভ লেজার এ ক্ষেত্রে সব ধরনের ত্বকের জন্য প্রযোজ্য ও নিরাপদ। তারপরও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ জরুরি। ত্বকের ধরন আর বর্ণ বুঝে সেরা ট্রিটমেন্ট বেছে নেওয়া চাই।
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ট্রিটমেন্ট
এর মাধ্যমে শক্তি পৌঁছে যায় ত্বকের গভীরে, তাপ প্রয়োগ করে বাড়ায় কোলাজেন আর ইলাস্টিনের উৎপাদন। এতে করে ত্বক দেখায় টান টান, পরিপুষ্ট ও মসৃণ। ট্রিটমেন্টের ফলে কমে আসে বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখা। কার্যত দৃশ্যমান ফল দেওয়া এই ট্রিটমেন্টগুলো ত্বকের সার্বিক সুস্থতায় দারুণ।
স্ক্যাল্পট্রা ইনজেকশন
ইনজেকটেবল ট্রিটমেন্টগুলোর মধ্যে এটি বিশেষজ্ঞদের কাছেও জনপ্রিয়। এর প্রধান কাজ হচ্ছে কোলাজেন তৈরি। ত্বকের ফাইব্রোব্লাস্টকে উদ্দীপ্ত করে কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে এটি। দেয় টান টান, পরিপুষ্ট ত্বক। যাদের ত্বকে শিথিলতার সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য দারুণ কার্যকর। বয়স ৪০-এর বেশি হলে তাই এই ইনজেকটেবল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডার্মাটোলজিস্টরা।
সহায়ক ভিটামিন সি
এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিদিনকার রূপরুটিনে যোগ করলে কোলাজেন পাবে বাড়তি সুরক্ষা। কোলাজেন উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি কো-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। টপিক্যালি ব্যবহারে কোলাজেন গঠনের প্রক্রিয়ায় সহায়ক। ভিটামিন সি ত্বককে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকেও সুরক্ষিত রাখে, যা কোলাজেন নষ্ট করে দেয়। রোধ করে বলিরেখা, সূক্ষ্মরেখা আর দাগছোপ। অন্যান্য ত্বকবান্ধব উপাদানের মতো এটি কাজ করতে তিন মাসের মতো সময় লাগে।
কেমিক্যাল পিল করিয়ে
স্কিন স্মুদেনিং আর টোন ঠিকঠাক করার জন্য এই ট্রিটমেন্টের জুড়ি নেই। কোলাজেন-সংক্রান্ত সহায়তাও দিয়ে থাকে এটি। আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড কেমিক্যাল পিল, যাতে গ্লাইকলিক অথবা ল্যাকটিক অ্যাসিডের উপস্থিতি থাকে, যেগুলো ত্বক এক্সফোলিয়েট করে ত্বকের পুনর্গঠনে এবং ত্বকের কোলাজেনকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি নতুন কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে।
প্রতিদিনকার পরিচর্যায় সানস্ক্রিন
কোলাজেন সংরক্ষণের সবচেয়ে সহজ উপায়। কারণ, একে ক্ষতিগ্রস্ত করার ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউভি রেডিয়েশন। বিশেষজ্ঞদের মত নিদেনপক্ষে এসপিএফ ৩০ ব্যবহারের। এর বেশি হলে তো আরও ভালো। ইউভিএ ও ইউভিবি—দুটো থেকেই রক্ষা পাওয়া যাবে। জিংক অক্সাইড আর টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইডের মতো উপাদানের উপস্থিতি থাকলে ভালো সানস্ক্রিনগুলোতে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে না হয় ভিটামিন ই এবং নিয়াসিনামাইড থাকুক।
ডায়েটে নজর
যেহেতু কোলাজেন একধরনের প্রোটিন, তাই প্রোটিনে ভরপুর ডায়েট এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। মাংস, মাছ বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা কোলাজেনের ভালো উৎস। কারণ, এগুলো প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের জোগান দেয়। অন্যদিকে বাদাম আর গ্রিন টির মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ খাবার কোলাজেনকে ভেঙে দেওয়া প্রি-র‌্যাডিক্যালের সঙ্গে যুদ্ধ করে।

 বিউটি ডেস্ক
মডেল: বর্ণ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top