skip to Main Content

ফিচার I প্রলয়ংকরী পনির

চিজ বা পনির। দুগ্ধজাত খাবার। আমিষ ও উপকারী চর্বিসমৃদ্ধ। সুস্বাদু। অথচ একধরনের পনিরকে গণ্য করা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক চিজ হিসেবে। নাম কাসু মারজু

ইতালির সার্দিনিয়া দ্বীপটি টাইরেনিয়ান সাগরের মাঝখানে অবস্থিত। ১ হাজার ৮৪৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। সাদা বালুর সৈকত আর পান্না-সবুজ রঙের পানিবেষ্টিত এই দ্বীপের অন্তর্দেশীয় ভূমি দ্রুত উঁচু হয়ে উঠে তৈরি করে পাহাড় ও দুর্গম পর্বতমালা। সেগুলোর খাড়া খাড়া বাঁক থেকেই রাখালেরা সংগ্রহ করেন কাসু মারজু। এটি একধরনের পোকায় আক্রান্ত পনির। ২০০৯ সালে এই পনিরকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ঘোষণা করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক চিজ হিসেবে। যার নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে এর প্রলয়ংকরী স্বাদও!
সিএনএন সূত্রে জানা যায়, পিওফিলা কাসেই নামের চিজ স্কিপার মাছি এই চিজের ফাটলে ডিম পাড়ে। পোকাগুলো ডিম থেকে ফোটে; পনিরের ভেতর দিয়ে গর্ত করে চলাচল করে। সর্বশেষে, প্রোটিন হজম করতে করতে সেটিকে রূপান্তর করে একধরনের নরম ক্রিমজাত পনিরে। এরপর পনির বিক্রেতারা এর ওপরের অংশ খুলে দেন, যেটি প্রায়ই পোকামাকড় থেকে অক্ষত থাকে। এরপর একটি চামচ দিয়ে কুড়িয়ে নেওয়া হয় এই ক্রিমি স্বাদ। তবে মনে রাখা চাই, এটি দুর্বল চিত্তের মানুষের জন্য নয়; কারণ, ভেতরের পোকাগুলো হঠাৎ নড়েচড়ে ওঠে!
স্থানীয়দের কেউ কেউ এই পনিরকে সেন্ট্রিফিউজে ঘোরান, যেন পোকাগুলো পনিরের সঙ্গে মিশে যায়। কেউ আবার এটি একেবারে প্রাকৃতিক অবস্থায় পছন্দ করেন এবং মুখ হাঁ করে নির্দ্বিধায় খেয়ে নেন! আপনি যদি এর প্রাকৃতিক স্বাদ পছন্দ করেন, তবে মারজু আপনাকে এমন এক স্বাদ এনে দেবে, যা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের স্মৃতিজাগানিয়া এবং ঝাল ও দীর্ঘস্থায়ী আফটারটেস্ট দিয়ে মুখ ভরিয়ে তুলবে।
কাসু মারজুকে কেউ কেউ কামোদ্দীপক হিসেবে গণ্য করেন। আবার কারও মতে, এটি মানবস্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ, পোকামাকড় কামড়ে খাওয়ার পরও বেঁচে থাকতে পারে এবং পরবর্তীকালে অন্ত্রে মায়াসিস বা ক্ষুদ্র ছিদ্র সৃষ্টি করতে পারে এটি। তবে এখন পর্যন্ত এমন কোনো ঘটনা কাসু মারজুর সঙ্গে যুক্ত হয়নি। এই পনির বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় নিষিদ্ধ হলেও সার্দিনিয়ার মানুষ শত শত বছর ধরে এটি পোকাসহ খেয়ে আসছে।
‘এই চিজে পোকামাকড়ের উপদ্রবই এর জাদু ও আনন্দ,’ সিএনএনকে বলেছেন সার্দিনিয়ান খাদ্যবিশারদ পাওলো সোলিনাস। তার মতে, কিছু সার্দিনিয়ান কাসু মারজুর কথা শুনেই কুঁকড়ে যান; কিন্তু যারা সারা জীবন নুনযুক্ত পেকোরিনো খেয়ে বড় হয়েছেন, তারা এর তীব্র স্বাদকে নির্দ্বিধায় ভালোবাসেন। ‘কিছু রাখাল এই পনিরকে একটি বিশেষ ব্যক্তিগত আনন্দ হিসেবে গণ্য করেন, যা শুধু কিছুসংখ্যক নির্বাচিত মানুষই উপভোগ করতে পারে,’ যোগ করেন সোলিনাস।
পোকা খাওয়া ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য অবশ্য নতুন কিছু নয়! সার্দিনিয়ান সাংবাদিক ও খাদ্য গবেষক, আশি-ঊর্ধ্ব বয়সী জিওভান্নি ফানচেলো সারা জীবন ব্যয় করেছেন স্থানীয় খাদ্য ইতিহাস অন্বেষণে। তার অভিমত, দীর্ঘকাল সার্দিনিয়া ছিল রোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ। ‘লাতিন ছিল আমাদের ভাষা। নিজ ভাষাতেই আমরা আমাদের প্রাচীন রান্নার ছাপ খুঁজে পাই,’ বলেন তিনি। তার মতে, ১৯০৯ সালের আগে সার্দিনিয়ান রেসিপিগুলোর কোনো লিখিত রেকর্ড ছিল না। সে বছরই মূল ভূখণ্ডের মেদিনা থেকে আগত চিকিৎসক ভিত্তোরিও অ্যাগনেত্তি সার্দিনিয়া সফর করেন এবং ‘লা নুয়োভা কুচিনা দেল্লে স্পেচিয়ালিতা রেজিওনালি’ শীর্ষক একটি বইয়ে ছয়টি রেসিপি সংগ্রহ করেন। ‘কিন্তু আমরা তো সব সময় কেঁচো খেয়ে এসেছি,’ বলেন ফানচেলো, ‘প্লিনি দ্য এল্ডার ও অ্যারিস্টটলও এ বিষয়ে কথা বলেছেন।’
ইতালির আরও দশটি অঞ্চলে পোকায় ধরা পনিরের ভিন্ন সংস্করণ আছে। তবে অন্যত্র এগুলোকে একক ঘটনা হিসেবে দেখা হলেও সার্দিনিয়ায় কাসু মারজু খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই পনিরের রয়েছে একাধিক নাম—কাসু বেচ্চু, কাসু ফাত্তিত্তু, হাসু মুইদু, ফর্মাজ্জিও মার্চো ইত্যাদি। দ্বীপের প্রতিটি উপ-অঞ্চলে এর নিজস্ব উৎপাদন পদ্ধতি আছে এবং তারা বিভিন্ন ধরনের দুধ ব্যবহার করে এটি তৈরি করেন।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top