নখদর্পণ I এক্সফোলিয়েশন এক্সপেকটেশন
মাসে একবার মেনিকিউর-পেডিকিউর যে মোটেই যথেষ্ট নয়, তা-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা। নখেরও জরুরি দ্য স্পটলাইট মোমেন্ট
বিউটি রুটিনে সব সময় ব্যাকসিটে নখ। দৈনন্দিন ব্যস্ততায় ত্বক, চুল কিংবা পোশাকের যত্ন করা হলেও নখের সৌন্দর্যে সময় বা এফোর্ট—কোনোটাই ঠিক তেমনভাবে দেওয়া হয় না। ফল—শুধু নখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়, এতটুকু না; বরং আত্মবিশ্বাসটাও মাটি হয়ে যায়। অথচ ত্বকের প্রতিটি অংশের মতো নখও সমান যত্ন পাওয়ার যোগ্য।
লেয়ারের পর লেয়ার নেইলপলিশের নিচে, কিউটিকল জমে, রান্নার সময় মসলার রঙে, কিংবা ধুলো-ময়লা জমে নখ তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে। নেইলপলিশ বা কালারে নখ রাঙিয়ে অনেকে মনে করেন, ব্যস, হয়ে গেল নখের সৌন্দর্য রক্ষা; অথচ বিষয়টা সম্পূর্ণ বিপরীত। এতে নখে শুধু একটা আলাদা আস্তরণই পড়ে; এ ছাড়া সে রকম কোনো কাজ হয় না।
তবে নখে এই বছরের পর বছর জমে থাকা আস্তরণ সরানোর উপায় কী। ডার্মাটোলজিস্ট ডানা স্টার্ন দিয়েছেন একটি ভিন্নমত। তার মতে, বর্তমানে এমন এক সময় পার হচ্ছে, যখন পুরোটা সময় হাতগুলো হাইলাইট হয়ে থাকে। করপোরেট অফিসে হোক, কিংবা কিচেনে বা স্ক্রলিংয়ের সময়ে মুঠোফোন ঘাঁটাঘাঁটি, অথবা হতে পারে কারও সঙ্গে হাত মেলানো কিংবা শুধু শুধু কোনো হ্যান্ড মুভমেন্ট—সবার আগে হাত, আঙুল, নখ—এগুলোই চোখে পড়ে। তাই অস্বস্তিতে পড়তে না চাইলে ত্বকের অন্য অংশের মতো হাতের দিকে দেওয়া চাই নজর।
নেইল এক্সফোলিয়েশন
শখ কিংবা বিলাসিতা নয়, সময়ের চাহিদা। পুরো লুকে আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া দিতে হতে পারে একটা গেম চেঞ্জার। কারণ, সুন্দর নখদর্পণ কখনোই আউটডেটেড হয় না; বরং ফাস্ট ফ্যাশনের সময়ে ক্ল্যাসিক নখ, ওভারঅল লুককে করে আরও ক্লাসি করে তোলে।
নখের উপরিভাগ থেকে মৃত কোষ, ড্যামেজড কেরাটিন সরিয়ে নখকে আরও উজ্জ্বল, আরও প্রাণবন্ত করার প্রক্রিয়াটিই নেইল এক্সফোলিয়েশন। নিয়মিত নেইল এক্সফোলিয়েশনে নখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকে, নখের ভঙ্গুরতা কমে আসে।
ত্বকের মতো, নখেও মরা কোষের আস্তরণ জমতে দেখা যায়। নেইল রিমুভার ব্যবহারে তুলা কিংবা টিস্যুর আস্তরণ, জেল মেনিকিউরে নখের উপরিভাগ আরও ভঙ্গুর হয়ে যায়। পিলিং বা ক্র্যাকিংয়ে নখ ধীরে ধীরে হলুদাভ হয়ে ওঠে। রেগুলার যারা নেইল এনহেন্সিং, জেল অ্যাপ্লিকেশন বা মেনিকিউর করিয়ে থাকেন, সবার ক্ষেত্রে নেইল এক্সফোলিয়েশন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। খুব সহজ একটা প্রক্রিয়া; কিন্তু নখের জন্য খুবই উপকারী নিয়মিত নেইল এক্সফোলিয়েশন।
প্রক্রিয়ার পুরোটা
নেইল এক্সফোলিয়েশন করা যেতে পারে দুভাবে—ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশন আর কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের জন্য এএইচএ এবং বিএইচএ সমৃদ্ধ গ্লাইকোলিক বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি নখের মরা কোষ দূর করে হেলদি কিউটিকলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। প্রথমে নখের ধরন বুঝে গ্লাইকোলিক বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড অ্যাপ্লাই করা চাই। এরপর চক্রাকারে নখে ধীরে ধীরে মাসাজ করে নিতে হবে। বেশি জোরে মাসাজ না করে আলতো হাতে আঙুলের মাথা দিয়ে মাসাজ করে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে নিলেই খুব সহজে কেমিক্যাল নেইল এক্সফোলিয়েশন করা সম্ভব।
ফিজিক্যাল নেইল এক্সফোলিয়েশনের ক্ষেত্রে নেইলপলিশ অ্যাপ্লাই করা থাকলে প্রথমে নেইলপলিশ রিমুভ করে নিতে হবে। একটি কোমল হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করে হাত প্রথমে ভালোভাবে ধুয়ে ত্বক উপযোগী এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা চাই। ধীরে ধীরে চক্রাকারে মাসাজ করার মাধ্যমে নখের কিউটিকল, জমে থাকা বাড়তি মরা কোষ তুলে ভালো করে কুসুম গরম পানিতে হাত ধুয়ে নিলেই ফিজিক্যালি নেইল এক্সফোলিয়েট করা সম্ভব।
নেইল এক্সফোলিয়েশনে এক্সফোলিয়েটর হিসেবে যে উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়েও রিসার্চের প্রয়োজন আছে। ফরমালডিহাইড সমৃদ্ধ এক্সফোলিয়েটর নখকে ভঙ্গুর করে ফেলে। তাই কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হিসেবে অবশ্যই গ্লাইকোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা ভালো। এ ছাড়া নখ ফাইলিংয়ে কী ধরনের বোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে, তা-ও হতে হবে নখের জন্য যথাযথ। নেইল বাফিংয়ে এমন বোর্ড বেছে নিতে হবে, যেন নখের উপরিভাগকে দুর্বল করে না ফেলে। নখের আর্দ্রতা ধরে রাখতে শক্ত হাতে ঘষাঘষি করা যাবে না কোনোভাবেই। কিউটিকল কাটার দিয়ে আলতো করে কিউটিকল কেটে নিতে হবে, যেন নখের গোড়ার অংশ পর্যন্ত কোনোভাবেই উঠে না আসে।
আছে অসুবিধাও
নিয়মিত এক্সফোলিয়েশনে যেমন সুবিধা আছে; অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েশনে ঝক্কিও কম হয় না। ভেজা নখে এক্সফোলিয়েশন করলে নখের চারপাশের নরম চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নখের আর্দ্র ভাব বজায় থাকে না এবং তা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই নখের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করতে না চাইলে সঠিক নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময় পরপর নেইল এক্সফোলিয়েশন করা যেতে পারে। নেইল এক্সফোলিয়েশনের দুরবস্থা থেকে বাঁচতে নেইল পেইন্ট রিমুভ করতে নরম কাপড় বা তুলায় নেইল পেইন্ট রিমুভার নিয়ে ধীরে ধীরে সার্কুলার মোশনে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিউটিকল স্ক্রাবিংয়ে সি সল্ট কিংবা ডালের গুঁড়াও উপকারী। এমারি বোর্ডকে বিদায় দিয়ে বেছে নেওয়া যায় ন্যানো গ্লাস টেকনোলজি সমৃদ্ধ বোর্ড। নখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে উইশলিস্টে যোগ হোক নেইল মাস্ক। কিউটিকল কাটার পর একে যথাসম্ভব নরম রাখতে সাহায্য করবে কিউটিকল অয়েলের ব্যবহার।
নখের সৌন্দর্যবর্ধনে যা-ই করা হোক না কেন, খেয়াল রাখা জরুরি, ওভারডু যেন কোনোভাবেই নখের স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যাঘাত না ঘটায়।
বিদিশা শরাফ
ছবি: সংগ্রহ
