skip to Main Content

এই শহর এই সময় I প্রসিদ্ধি ও প্রতিশ্রুতিশীলতায় প্রাঞ্জল

সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে রোদ-মেঘ-বৃষ্টির প্রাকৃতিক খেলায় জীবন কেটেছে নগরবাসীর। তাদের মননের খোরাক জোগাতে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনগুলোও ছিল প্রাণোচ্ছল। তাতে প্রসিদ্ধ ব্যক্তি থেকে শুরু করে নবীন এবং প্রতিশ্রুতিশীলদের সৃষ্টিসম্ভারের ঘটেছে প্রদর্শন ও পরিবেশন।
এস এম সুলতান। কিংবদন্তি বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী। তাকে ঘিরে ২২ আগস্ট থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর, রোববার বাদে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ের কামরুল হাসান প্রদর্শনালয়ে হয়ে গেল আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘শতবর্ষে সুলতান’।

শতবর্ষে সুলতান

ছবিগুলো প্রখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুনের তোলা। এতে শিল্পী সুলতানের পরিণত বয়সের চিন্তাধারা, ছবি আঁকা, দর্শন, জীবনযাপন, বরেণ্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, সংগীতকে ভালোবাসা, বাউলদের সঙ্গে সখ্য, বাঁশিতে সুর তোলা, শিশুশিক্ষা, প্রাণী ও প্রকৃতিপ্রেম প্রভৃতি ধরা পড়েছে। ছবিগুলো মামুন তুলেছেন ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত। বেশির ভাগ ছবিই সাদাকালো। ছবির পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে মূল নেগেটিভ, সুলতানের হাতে লেখা চিঠি, ডায়েরি এন্ট্রি, অঙ্কন, অন্যান্য স্মারকসহ বরেণ্য শিল্পীর অনেক প্রতিকৃতিসমেত তার আত্মমগ্নতার অভিব্যক্তির প্রদর্শন ঘটেছে। এ উপলক্ষে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও এইচএসবিসি বাংলাদেশ যৌথভাবে প্রকাশ করেছে ১৬০ পৃষ্ঠার বিশেষ গ্রন্থ ‘সিডিং দ্য সোল’।

শুধু গান গেয়ে পরিচয়

সাবিনা ইয়াসমীন। ‘একুশে পদক’ ও ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’জয়ী কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী। ৭ সেপ্টেম্বর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় সম্মাননা দেওয়া হয় এই গুণীজনকে। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেই আয়োজনে ছিল শিল্পীর একক সংগীতানুষ্ঠানও। ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ শিরোনামে। ছিল তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা। প্রদর্শিত হয় তার ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি। তার গাওয়া ‘গীতিময় সেই দিন চিরদিন বুঝি আর এলো না’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। শিল্পী গেয়ে শোনান ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’ ‘তুমি ফুলকে বল ঝরে যেতে’, ‘শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘আমি আছি থাকব ভালোবেসে মরব’, ‘ইশারায় শিস দিয়ে আমাকে ডেকো না’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘সে যে কেনো এলো না’ প্রভৃতি গান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন।

এই শহরের হাওয়াবিবি

‘হাওয়াবিবি’। প্রতিশ্রুতিশীল চিত্রশিল্পী শৈলী শ্রাবন্তীর গভীর অর্থবোধী চিত্রকর্ম সিরিজ। এ সিরিজের চিত্রকর্ম নিয়ে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে আয়োজিত হয়েছে বিশেষ প্রদর্শনী। ২৫ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর। ‘এই শহরের হাওয়াবিবি’ শিরোনামে। জানা কথা, হাওয়াবিবি একটি পৌরাণিক প্রতীকী চরিত্র, যে নিঃশব্দে নগরভূমিতে বিচরণ করে; সমাজ, সংস্কৃতি ও প্রতীকের মধ্যকার সেই সব শক্তিকে পর্যবেক্ষণ করে, যা নারীর জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। শিল্পী শ্রাবন্তীর মিশ্র মাধ্যমে সৃষ্ট ৪৫-৪৭টি শিল্পকর্মে প্রাচ্যচিত্রের ঐতিহ্যবাহী কৌশল মিলিত হয়েছে সমসাময়িক উপাদানের সঙ্গে। যেমন জলরঙের ওয়াশ, অ্যাক্রিলিক, কলম, মাটি ও স্থানীয় উপকরণ। এর মধ্য দিয়ে শিল্পী অনুসন্ধান করেছেন প্রাচীন ও আধুনিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, যা যুগে যুগে নারীর স্বতন্ত্রতাকে আবদ্ধ করে রেখেছে। নারীজীবনের অভিজ্ঞতায় মিথ, স্মৃতি ও শহুরে জীবন কীভাবে একসূত্রে গাঁথা, তা প্রত্যক্ষ করার জন্য হাওয়াবিবি এক অনন্য দৃষ্টিকোণ হয়ে ওঠে। প্রদর্শনীটি মনে করিয়ে দেয় প্রতিদিনের জীবনে লুকিয়ে থাকা প্রতিরোধের ক্ষুদ্র অথচ শক্তিশালী প্রকাশগুলোকে, যা স্বাধীনতা, স্বকীয়তা ও কণ্ঠের অবিরাম সন্ধানকে প্রতিফলিত করে এক এমন পৃথিবীতে, যেটি এখনো পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর প্রভাব বহন করছে।

 লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top