skip to Main Content

ফরহিম I পুরুষের রূপচর্চায় প্রাচীন চীনা ম্যাজিক

ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ হিলিং মেথড, কিন্তু রয়েছে বিজ্ঞানের ব্যাকআপ। রোজকার ত্বকচর্চায় হতে পারে চমৎকার সংযোজন

সারা বিশ্ব, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া, হঠাৎ করে একটি প্রাচীন চীনা পদ্ধতিতে মজে উঠেছে। জেড বা গোলাপি কোয়ার্টজের তৈরি মসৃণ, বাঁকানো একটি পাথর দিয়ে মুখে মাসাজ, এমন দৃশ্য দখল করে নিয়েছে ইনস্টাগ্রাম রিল থেকে শুরু করে ইউটিউব টিউটরিয়াল। এই পাথরের টুকরার নাম গুয়া শা। জেন-জি ইনফ্লুয়েন্সারদের কল্যাণে এটি জনপ্রিয় হলেও এর ইতিহাস প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো। প্রশ্ন হলো, এই ট্রেন্ড কি শুধুই একটি নতুন উন্মাদনা, নাকি এর পেছনে সত্যিই কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? পুরুষের ত্বকচর্চায় এটি কি আসলেই কোনো কার্যকরী সংযোজন হতে পারে?
গুয়া শা আসলে কী
অনেকের কাছে এটি কেবলই ফেশিয়াল মাসাজের একটি নতুন সরঞ্জাম। কিন্তু এর ঐতিহ্য অনেক পুরোনো এবং ভিন্ন। আসান্তে একাডেমি অব চায়নিজ মেডিসিনের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর সঙ কের মতে, গুয়া মানে ঘষা বা আঁচড়, আর শা মানে বিষাক্ত পদার্থ। অর্থাৎ, গুয়া শা মানে হলো, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ঘষে বের করে দেওয়া।
ঐতিহ্যগতভাবে, এটি ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য ব্যবহৃত হতো না; বরং ফ্লু, শরীরে ব্যথা বা জ্বরের মতো সমস্যায় পিঠ, ঘাড় বা কাঁধের মতো অংশে একটি বিশেষ সরঞ্জাম দিয়ে বারবার ঘষা হতো। ফলে ত্বকে লালচে দাগ বা র‌্যাশ দেখা দিত, যা দেখে মনে হতো, যেন শরীরের ভেতরের সমস্যা বাইরে বেরিয়ে আসছে। প্রফেসর সঙ বলেন, এটি বেশ বেদনাদায়ক হতে পারে, কিন্তু ফল তাৎক্ষণিক।
সৌন্দর্য জগতে আধুনিক রূপান্তর
বেশ কিছুদিন হয়েছে এই প্রাচীন পদ্ধতি সৌন্দর্যশিল্পে এক নতুন রূপে প্রবেশ করেছে। এখন এটি জেড বা রোজ কোয়ার্টজের মতো সুন্দর পাথর দিয়ে তৈরি একটি মসৃণ সরঞ্জাম, যা মুখের ত্বকে আলতোভাবে মাসাজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। পশ্চিমা বিশ্বে এর মূল পরিচিতি লিমফেটিক ড্রেনেজ উন্নত করা বা মুখের ফোলাভাব কমানোর এক সহজ উপায় হিসেবে।
ঝুঁকছেন পুরুষেরাও
একসময় রূপচর্চা কেবল নারীদের বিষয় বলে মনে করা হলেও সেই ধারণা এখন অতীত। আজকাল পুরুষেরাও নিজেদের যত্ন নিতে এবং সুন্দর দেখাতে অনেক বেশি সচেতন। আর এখানেই গুয়া শার মতো একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী পদ্ধতি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। ইনফ্লুয়েন্সার জ্যাকব সেইকেলের মতো অনেকে এর ভক্ত। তিনি জাপানে থাকার সময় গুয়া শা ব্যবহার করতে শেখেন এবং এর তাৎক্ষণিক ফলে মুগ্ধ হন। তার মতে, খুব অল্প সময়ে এটি ব্যবহারে ফল পাওয়া যায়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মুখের ফোলাভাব কমাতে এবং ত্বক টানটান করতে এটি দারুণ কাজ করে।
শুধু ইনফ্লুয়েন্সাররাই নন, হলিউড অভিনেতা প্যাট্রিক ডেম্পসির মতো সেলিব্রিটিরাও এর কার্যকারিতার প্রশংসা করেছেন। জ্যাকবের ভাষ্য অনুসারে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রায় ৬ সপ্তাহ গুয়া শা ব্যবহারের পর তিনি দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন লক্ষ করেন। নিয়মিত ব্যবহারে তার মুখের বোন স্ট্রাকচার, বিশেষ করে জ-লাইন আগের চেয়ে অনেক বেশি শার্প হয়েছে এবং ত্বকের ফাইন লাইন বা বলিরেখাও কমেছে বলে দাবি করেন তিনি।
নতুনদের জন্য
গুয়া শা ব্যবহার সহজ মনে হলেও এর থেকে সেরা ফল পেতে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।
প্রস্তুতি
প্রথমে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে এরপর ত্বকে ভালো মানের ফেশিয়াল অয়েল বা সেরাম মেখে নিতে হবে, যাতে গুয়া শা ত্বকের ওপর সহজে চলাচল করতে পারে। তেল ত্বককে মসৃণ করে এবং অযথা ঘর্ষণ থেকে বাঁচায়।
সঠিক কোণ
টুলটি ত্বকের সঙ্গে ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি কোণে রাখতে হবে, একদম খাড়াভাবে নয়। চাপ হবে মাঝারি, খুব বেশি জোরে মাসাজের প্রয়োজন নেই।
চলাচলের দিক
সর্বদা ভেতর থেকে বাইরের দিকে এবং নিচ থেকে ওপরের দিকে টানা চাই। যেমন থুতনি থেকে কানের দিকে, নাকের পাশ থেকে গালের দিকে এবং কপাল থেকে হেয়ারলাইনের দিকে। প্রতিটি টান ৩ থেকে ৫ বার পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
লিমফেটিক ড্রেনেজ
ঘাড়ের অংশে ওপর থেকে নিচের দিকে টানাই নিয়ম। ঠিক তেমনি কানের নিচ থেকে কলারবোনের দিকে। এটি লিম্ফ নোডগুলোকে সক্রিয় করার মাধ্যমে শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
আসলেই কি কাজের
সত্যি বলতে, এ বিষয়ে মিশ্র মতামত রয়েছে। ১১১ স্কিনের প্রতিষ্ঠাতা ও মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. ইয়ানিস আলেকসানড্রাইডিসের মতে, গুয়া শার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কার্যকারিতা এখনো মূলত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রমাণের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ নিয়ে বড় কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি। ত্বকের যে উন্নতি দেখা যায়, তা হয়তো সাময়িক রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি কিংবা ত্বকের নিচের জলীয় অংশ কমে যাওয়ার কারণে হতে পারে।
সঠিক গুয়া শা বাছাই
বাজারে বিভিন্ন ধরনের পাথর; যেমন জেড, রোজ কোয়ার্টজ বা অ্যামিথিস্টের তৈরি গুয়া শা পাওয়া যায়। এর সঙ্গে ক্রিস্টাল হিলিংয়ের ধারণাও জড়িত। বিশ্বাস করা হয়, রোজ কোয়ার্টজ রক্তসঞ্চালনে সাহায্য করে, আর জেড কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে এবং ত্বক টানটান করতে বেশি কার্যকরী। তাই ফেশিয়াল মাসাজের জন্য সবুজ জেড বেশি সুপারিশ করা হয়।
গুয়া শা কোনো জাদুকরি সমাধান নয়, যা রাতারাতি চেহারা বদলে দেবে। এটি কেবল একটি স্কিন কেয়ার টুল নয়, বরং একটি রুটিন; যা দিনের শেষে বা শুরুতে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করার সুযোগ করে দেয়। এর বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপকারিতা হলো রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি, যা স্বাস্থ্যকর ত্বকের মূল ভিত্তি। আর এর দৃশ্যমান ফল, যেমন ফোলাভাব কমা বা চোয়াল সুস্পষ্ট হওয়া আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তাই কেউ যদি গ্রুমিং রুটিনে নতুন কিছু যোগ করতে চান; যা সহজ, প্রাকৃতিক ও কার্যকর, সে ক্ষেত্রে গুয়া শা থাকতে পারে পছন্দের তালিকায়।

 স্বর্ণা রায়
মডেল: সায়েম
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top