skip to Main Content

ফিচার I সংখ্যাতত্ত্বে বিয়ের তারিখ

বর ও কনে—উভয়ের জীবনে বিয়ের তারিখের তাৎপর্য অসীম। তা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় অনেকে মানেন নানা রীতি, হিতোপদেশ। সংখ্যাতত্ত্বেও বিশ্বাস রাখেন কেউ কেউ

সংখ্যাতত্ত্ব। সংখ্যা নিয়ে এমন গবেষণা, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও উদ্দেশ্যের ওপর যা প্রভাব ফেলে বলে বিশ্বাস করা হয়। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ পিথাগোরাসের শিক্ষার ভিত্তিতে এটি চর্চিত। সংখ্যার মারপ্যাঁচে বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ তারিখ বাছাইয়েও এতে ভরসা রাখেন অনেকে।
হিসাব-নিকাশ
সংখ্যাতত্ত্ব অনুসারে বিয়ের আদর্শ তারিখ হিসাব কষার ক্ষেত্রে কয়েকটি সংখ্যা মাথায় রাখা দরকার। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আপনার জীবনযাপনের সংখ্যা, সর্বজনীন দিবস সংখ্যা এবং বৈবাহিক সংখ্যা। জীবনযাপনের সংখ্যাটি এমন, যেটি আপনাকে এবং আপনার জীবন কাটানোর ধরনকে সুনির্দিষ্ট করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন রাজ্যের জ্যাকসনভিল শহরে অবস্থিত সুস্থতাবিষয়ক বিশেষ কর্মসূচি সোরিং হার্ট মেডিসিনের স্বজ্ঞাত সংখ্যাতত্ত্ববিদ ও রূপান্তরকারী পথপ্রদর্শক কলবি ম্যাকম্যানামনের মতে, নিজের জন্মতারিখের নম্বরগুলোর যোগফল হিসেবে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, সেটিই আপনার জীবনযাপনের সংখ্যা। সে ক্ষেত্রে সব সংখ্যা একত্রে যোগ করার আগে সংখ্যাগুলোকে একটি একক অঙ্কে রূপান্তর করা আবশ্যক। উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন, আপনার জন্ম ২০০১ সালের ১ সেপ্টেম্বর; আপনাকে প্রথমেই মাস, তারিখ ও বছরের সংখ্যাগুলোর একক অঙ্কে রূপান্তর করা সংখ্যা যোগ করতে হবে: ৯+১+৩ (২+০+০+১=৩) = ১৩, যা একক অঙ্কে দাঁড়াবে ৪ (যেহেতু ১+৩ = ৪)।
সর্বজনীন দিবস সংখ্যা দিয়েও সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিতে বিয়ের তারিখ বেছে নিতে পারেন। নিজের জীবনযাপনের সংখ্যা যেভাবে বের করেছেন, এটিও সেভাবে বের করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে যদি ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ধরি, তাহলে সমীকরণটি হবে এমন: ২+২০+২০২৪। তাতে ২ অবিকল রয়ে যাবে একক অঙ্ক বলে; কিন্তু ২০ পরিণত হবে ২-এ (২+০=২) এবং ২০২৪ হয়ে উঠবে ৮ (২+০+২+৪=৮)। ফলে ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একটি সর্বজনীন দিবস হিসেবে সংখ্যাতত্ত্বে দাঁড়াবে ৩-এ; কেননা, ২+২+৮=১২ এবং ১২ একক অঙ্কে হবে ৩ (১+২=৩)।
ম্যাকম্যানামন বলেন, ‘নিজের জীবনযাপনের সংখ্যার সঙ্গে সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর জীবনযাপনের সংখ্যা যোগ করার মাধ্যমেও বৈবাহিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব।’ সেই বৈবাহিক সংখ্যাকে সর্বজনীন দিবস সংখ্যার সঙ্গে যোগ করে বিয়ের সম্ভাব্য তারিখ বেছে নিতে পারেন। ‘সংখ্যাটি যদি ৪ কিংবা ৬ হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা! অন্য কোনো সংখ্যাও অবশ্য সুখকর হতে পারে,’ বলেন তিনি।
তারিখ তাৎপর্য
সংখ্যাতত্ত্ব একক অঙ্ক তথা ১ থেকে ৯-এর খেলা! এর মধ্যে প্রতিটি সংখ্যাই যে ইতিবাচক স্পৃহা ছড়ায়, তা নয়। তাই তারিখ বেছে নেওয়ার আগে পরখ করা যাক কোন সংখ্যার কী তাৎপর্য।
 সংখ্যা ১: সংখ্যাতত্ত্বে বিয়ের তারিখের সংখ্যা ১ হওয়া সব মিলিয়ে দাপুটে নতুন সূচনার বার্তাবাহী।
 সংখ্যা ২: দম্পতির মধ্যে অংশীদারত্ব ও সহানুভূতির নিরিখে এটি একটি দারুণ সংখ্যা।
 সংখ্যা ৩: এটি একটি সৃজনশীল ও আমুদে সংখ্যা। কলবি ম্যাকম্যানামনের মতে, ‘আপনি যদি এই প্রভাবের নিমিত্তে বিয়ে করেন, তাহলে আপনার বিবাহে সম্ভবত শৈল্পিক আত্মপ্রকাশ যুক্ত হবে এবং দাম্পত্যজীবনে সৃজনশীলতা বিরাজ করবে, যদিও তা কখনো কখনো আপনাকে অস্থির করে তুলতে পারে!’
 সংখ্যা ৪: এই সংখ্যা অঙ্গীকার, একটি জোরালো বনিয়াদ এবং ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি আপনার বিয়ের তারিখে একটি উপকারী স্পৃহা এনে দেবে; কেননা, শুরু থেকে দাম্পত্যের একটি নিরেট ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে এ সংখ্যা।
 সংখ্যা ৫: সংখ্যাটি একটি রোমাঞ্চপূর্ণ ও অভিযাত্রিক দাম্পত্যের লক্ষ্যবাহী; যদিও দাম্পত্যজীবন খানিকটা অস্থির কিংবা বহির্মুখী করে তোলার ঝুঁকি এতে বিদ্যমান।
 সংখ্যা ৬: বিয়ের তারিখের সংখ্যা হিসেবে ৬ আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা, গৃহপ্রেম, পরিবার ও সন্তানের প্রতিনিধিত্বশীল। ‘এই সংখ্যার স্পৃহা কাজ করে দাম্পত্যের মূল হিসেবে এবং তাতে ছড়ানো থাকে ভালোবাসার রেশ। বিয়ের মতো বিশেষ দিনের ক্ষেত্রে এটি ভীষণ রকমের উপকারী স্পৃহা,’ অভিমত মার্কিন সংখ্যাতত্ত্ববিদ ম্যাকম্যানামনের।
 সংখ্যা ৭: এর পক্ষে একটি গভীর আত্মিক সংযোগের প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব। কিন্তু কলবি ম্যাকম্যানামন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এ ক্ষেত্রে বর-কনের অবশ্যই পরস্পরকে যথেষ্ট ছাড় দেওয়ার এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার মানসিকতা ধারণ করতে হবে; অন্যথায় বিপদ আসন্ন! তবে সার্বিকভাবে বিয়ের তারিখের সংখ্যা হিসেবে ৭-এর প্রভাব মোটেই আদর্শ নয়; তাই সম্ভব হলে এটি এড়িয়ে যাওয়া শ্রেয়।
 সংখ্যা ৮: ব্যবসা ও ক্যারিয়ারের নিরিখে একটি সফল অংশীদারত্বের প্রতিনিধিত্ব করে এই সংখ্যা। ফলে বিয়ে কিংবা পরিবারের তুলনায় বরং কর্মক্ষেত্র প্রসঙ্গেই একে গুরুত্ব দেওয়া মঙ্গল।
 সংখ্যা ৯: এটি কোনো সম্পর্ক সূচনার তুলনায় বরং সমাপ্তি টানার পক্ষে কার্যকরী সংখ্যা। তাই বিয়ের তারিখ হিসেবে এর দ্বারস্থ হওয়া বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়।
বাছাইয়ে বিচক্ষণতা
সংখ্যার মারপ্যাঁচ তো জানা গেল; সেসব মাথায় রেখে, সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে বিয়ের তারিখ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উত্তম।
 ভালোবাসা, অংশীদারত্ব ও সমৃদ্ধির প্রতিনিধিত্বশীল—বিয়ের তারিখে এমন সংখ্যা বেছে নিতে পারলে দাম্পত্যজীবন আনন্দমুখর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে বলে অভিমত কলবি ম্যাকম্যানামনের। নিজের জীবনযাপন সংখ্যা ও বৈবাহিক সংখ্যার সমন্বয়ে তা নির্ধারণ করা যেতে পারে। অথবা নজর রাখতে পারেন সর্বজনীন দিবস ও মাসের সংখ্যার ওপর।
 ‘একটি সফল দাম্পত্যজীবন গড়ে তোলার পক্ষে সংখ্যা ৪ ও ৬ সবচেয়ে সেরা ভূমিকা রাখতে সক্ষম,’ বলেছেন ম্যাকম্যানামন। ‘সংখ্যা ৪ হলো বনিয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী। আপনি যদি এ সংখ্যার প্রভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন, তাহলে দাম্পত্যের একটি নিরেট ভিত্তি গড়ার আত্মবিশ্বাস পাবেন। অন্যদিকে, সংখ্যা ৬ হলো গৃহপ্রেম ও পরিবারের প্রতিনিধি। সহানুভূতিশীল ও ভালোবাসাপূর্ণ দাম্পত্য আবহের এক উষ্ণ সংযোগ গড়ায় সহায়ক এ সংখ্যার স্পৃহা।’
 সংখ্যা ৭ ও ৯ তো বটেই, কখনো কখনো ৫-ও এড়িয়ে যাওয়া শ্রেয়। কেননা, বিয়ের তারিখের সংখ্যা হিসেবে এগুলোর প্রভাব সাধারণত বিরূপ। ৭-এর পক্ষে দাম্পত্যজীবনকে শীতল ও বিচ্ছিন্ন এবং ৯-এর পক্ষে সমাপ্তি টেনে দেওয়ার প্রভাব ছড়ানো সম্ভব। অন্যদিকে, সংখ্যা হিসেবে ৫ এ ক্ষেত্রে খানিকটা অস্থিরচিত্ত করে তুলতে পারে যুগলজীবন।
প্রবাদ আছে, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’। দাম্পত্যজীবন শুরুর কথা যারা ভাবছেন, তারা যদি সংখ্যাতত্ত্বে আস্থা রাখেন, তাহলে মেনে চলতে পারেন এর দিকনির্দেশিকা। না মানলে, অর্থাৎ বিশ্বাস না করলেও অবশ্য ক্ষতি নেই বোধ হয় খুব একটা!
 লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top