হেঁশেলসূত্র I পিঠা পর্ব
শীতকাল মানেই হরেক রকমের সুস্বাদু পিঠা খাওয়ার ধুম! এমন মৌসুমে চেনা উপাদানের কিঞ্চিৎ অচেনা পিঠার স্বাদ নিতে পারলে মন্দ হয় না। রেসিপি হাজির করলেন নাজিয়া ফারহানা
ছবি: হুমায়রা আরমিন পৃথী
ক্ষীর পুলি
পরিমাণ: ৮-১০টি।
উপকরণ [পুর]: কোরানো নারকেল ১ কাপ, গুড় বা চিনি আধা কাপ অথবা স্বাদ অনুযায়ী, এলাচিগুঁড়া আধা চা-চামচ, ঘি ১ চা-চামচ।
উপকরণ [পুলি খোলার ময়দা]: চালের গুঁড়া ১ কাপ, পানি ১ কাপ, লবণ এক চিমটি, তেল ১ চা-চামচ।
উপকরণ [ক্ষীর]: তরল দুধ ১ লিটার, চিনি বা গুড় আধা কাপ অথবা স্বাদ অনুযায়ী, এলাচি ২-৩টি, তেজপাতা ১টি, ঘন দুধ বা মাওয়া (ঐচ্ছিক) ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি: পুর তৈরির জন্য প্যানে ঘি দিয়ে নারকেল ২-৩ মিনিট ভাজুন। এবার গুড় বা চিনি দিয়ে, কম আঁচে নেড়ে পুর শুকনো ও একটু আঠালো হলে নামিয়ে রাখুন। তারপর তাতে এলাচিগুঁড়া মিশিয়ে নিন।
পুলি খোলার ময়দার জন্য পানি, লবণ ও তেল চুলায় দিন। ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া ঢেলে দিন। এবার কম আঁচে ১ মিনিট নেড়েচেড়ে খামির মতো করুন। গরম থাকা অবস্থায় হাত ভিজিয়ে ভালোভাবে মেখে নরম ডো বানানো চাই। পুলি বানাতে ময়দা থেকে ছোট লেচি নিয়ে, হাত দিয়ে পাতলা করে চ্যাপ্টা করুন। এবার মাঝখানে নারকেলের পুর দিন। অর্ধচন্দ্রাকৃতির মতো ভাঁজ করে পুলির মুখ ভালোভাবে চেপে বন্ধ করুন।
ক্ষীর বানাতে দুধ চুলায় দিয়ে এলাচি ও তেজপাতা দিন। অর্ধেক পর্যন্ত কমে ঘন হলে চিনি বা গুড় যোগ করুন। চাইলে এবার ঘন দুধ বা মাওয়া যোগ করতে পারেন।
শেষ ধাপে, দুধ ফুটলে পুলিগুলো আস্তে আস্তে দিয়ে দিন। কম আঁচে ১০-১২ মিনিট রান্না করুন, যেন পুলি ফুলে ওঠে। আরও ৫-৭ মিনিট জ্বাল দিন, যেন ক্ষীর ঘন ও সুগন্ধি হয়।
গরম বা ঠান্ডা দুভাবেই সুস্বাদু লাগবে। উৎসব, অতিথি বা যেকোনো দিনে স্পেশাল মিষ্টি পিঠা হিসেবে পরিবেশন করতে পারেন।
কাশ্মীরি ভাপা
উপকরণ: চালের গুঁড়া ২ কাপ, গুড় (খেজুরের গুড় হলে ভালো) ১ কাপ, কোরানো নারকেল ১ কাপ, দুধ ১ কাপ, এলাচিগুঁড়া আধা চা-চামচ, ঘি ২ চা-চামচ, কিশমিশ ও বাদামকুচি পরিমাণমতো।
প্রণালি: প্রথমে কোরানো নারকেল ও গুড় হালকা গরম করে মিশিয়ে নিন। চালের গুঁড়া দুধ ও অল্প পানি দিয়ে ঝুরঝুরে করে নিন। এবার ভাপা পিঠার ছাঁচে নিচে এক স্তর চালের গুঁড়া দিন, তারপর নারকেল-গুড়ের পুর, তার ওপরে এলাচিগুঁড়া যোগ করুন। ভাপে ১০ থেকে ১২ মিনিট রেখে, বের করে ঘি, কিশমিশ ও বাদামকুচি দিয়ে সাজিয়ে, গরম গরম পরিবেশন করুন।
কদম ফুল
উপকরণ [মণ্ড]: চালের গুঁড়া ২ কাপ, ময়দা (ঐচ্ছিক) আধা কাপ, লবণ ১ চিমটি, গরম পানি প্রয়োজনমতো।
উপকরণ [পিঠার ভাজা]: তেল পরিমাণমতো।
উপকরণ [সিরা]: চিনি ১ কাপ, পানি আধা কাপ, এলাচি ২টি, ঘি (ঘ্রাণের জন্য) ১-২ চামচ।
প্রণালি: মণ্ড তৈরির জন্য একটি প্যান গরম করে চালের গুঁড়া কয়েক মিনিট শুকনা ভেজে নিন (এর ফলে পিঠা শক্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না)। এবার একটি বাটিতে চালের গুঁড়া, লবণ আর ময়দা মিশিয়ে নিন। ধীরে ধীরে গরম পানি দিয়ে নরম অথচ শক্ত মণ্ড তৈরি করুন। মণ্ড ঢেকে ১০ মিনিট রেখে দিন।
মণ্ড থেকে ছোট ছোট লেচি নিন। মুঠো আকারে ফুলের মতো করে ৪-৫ পাপড়ির ছোট আকৃতি বানান। এবার দেখতে ফুলের আকার পাবে। চাইলে মাঝখানে টুথপিক দিয়ে সামান্য দাগ টেনে দিতে পারেন।
পিঠা ভাজার জন্য একটি কড়াইতে পরিমাণমতো তেল গরম করুন। অল্প আঁচে পিঠাগুলো সোনালি রং হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিয়ে, তেল ঝরিয়ে নিন।
সিরা তৈরির জন্য পানি ও চিনি একসঙ্গে দিয়ে ৩-৪ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার এলাচি ও একটুখানি ঘি যোগ করুন। সিরা ঘন না করে পাতলা রাখা উত্তম।
শেষ ধাপে ভাজা পিঠাগুলো গরম সিরায় ২-৩ মিনিট ভিজিয়ে তুলে নিন। চাইলে ওপরে সামান্য তিল ছিটিয়ে দিয়ে, পরিবেশন করতে পারেন।
ডিম সুন্দরী
উপকরণ [পিঠা খোলা]: চালের গুঁড়া ২ কাপ, লবণ ১ চিমটি, পানি প্রয়োজন অনুযায়ী (পাতলা ব্যাটার মতো)।
উপকরণ [পুর]: ডিম ৪-৫টি, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, কাঁচা মরিচ (কুচি করা) ২-৩টি, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, গোলমরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, তেল (পুর ভাজার জন্য) ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি: পুর তৈরির জন্য একটি বাটিতে ডিম ফেটিয়ে, তাতে পেঁয়াজকুচি, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতাকুচি, লবণ ও গোলমরিচগুঁড়া মিশিয়ে নেওয়া চাই। এবার একটি প্যান গরম করে অল্প তেল দিন, ডিমের মিশ্রণ ঢেলে হালকা ওমলেটের মতো ভেজে নিন। ঠান্ডা হলে ছোট ছোট কিউব বা টুকরো করে রাখুন।
খোলার ব্যাটার তৈরির জন্য চালের গুঁড়ায় সামান্য লবণ মিশিয়ে, পানি দিয়ে পাতলা ডো বা ব্যাটার বানান। এর ঘনত্ব হওয়া চাই পাটিসাপটা বা চিতই পিঠার মতো; খুব ঘন না, আবার খুব পাতলাও না।
পিঠা ভাজার জন্য নন-স্টিক প্যান বা তাওয়া অল্প তেল ব্রাশ করে গরম করুন। এক চামচ ব্যাটার ঢেলে প্যান কেকের মতো গোল করে ছড়িয়ে দিন। সঙ্গে সঙ্গে মাঝখানে ১ থেকে ২ চামচ ডিমের পুর যোগ করুন। পিঠার চারদিকে ব্যাটার একটু দিয়ে পুর ঢেকে দিন (অর্ধেক ঢাকনার মতো)। দুই পাশ হালকা বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন। চুলার আঁচ কম বা মাঝারি রাখা চাই; তাহলে পিঠা ভেতর পর্যন্ত সমানভাবে সেদ্ধ হবে।
গরম গরম পরিবেশন করুন। চাইলে কেচাপ, চাটনি বা সসের সঙ্গে খেতে পারেন।
শাহি মালাই চিতই
উপকরণ: চালের গুঁড়া ২ কাপ, দুধ ২ কাপ, লবণ সামান্য, তেল ১ চা-চামচ, দুধ (মালাই তৈরির জন্য) ১ লিটার, চিনি আধা কাপ, এলাচিগুঁড়া কোয়ার্টার চা-চামচ।
প্রণালি: চালের গুঁড়া, দুধ, লবণ ও তেল মিশিয়ে পাতলা ব্যাটার তৈরি করুন। চিতই পিঠা তৈরির ছাঁচে ঢেলে এক পিঠ ভেজে নিন। অন্যদিকে মালাই তৈরির দুধ জ্বাল দিয়ে অর্ধেক করে নামিয়ে চিনি ও এলাচিগুঁড়া দিন; হয়ে গেল মালাই। ঠান্ডা পিঠার ওপর মালাই ঢেলে ঠান্ডা অবস্থায় পরিবেশন করুন।
