এডিটরস কলাম I যেতে চাই আরও দূর
সময়ের সঙ্গে না থাকলে যে সমকালীন মানুষ হওয়াই সম্ভব নয়! যা হোক, পত্রিকার নির্দিষ্ট দিনের এই অংশগুলো পড়তে পড়তে ভাবনায় এলো- কেমন হয়, এমন একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে পারলে
স্বপ্ন যত বড় হোক না কেন, তার বাস্তবায়ন বড় জায়গা থেকে শুরু হয় না। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আলবেয়ার কাম্যু তাঁর ‘দ্য মিথ অব সিসিফাস’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘সব মহান কর্ম ও চিন্তা শুরু হয় রাস্তার কোণ নয়তো রেস্তোরাঁর ঘূর্ণায়মান দরজা থেকে।’ কথাটার পরিপ্রেক্ষিত ও বাস্তবতা যদিও ভিন্ন এবং তা যা-ই হোক, আমি একে গ্রহণ করি অন্য এক ইতিবাচক দিক থেকে, যা মানুষের সম্ভাবনা ও বিকাশের পথ দেখাতে পারে। কথাচ্ছলে, আড্ডায় এমন কোনো আইডিয়ার জন্ম হতে পারে, যেখান থেকে পল্লবিত হতে পারে বড় কোনো সংগ্রাম ও সফলতা, যা রূপ নিতে পারে বিশাল এক কর্মযজ্ঞের, বদলে দিতে পারে পৃথিবীকে। এসব যখন ভাবি, তখন মনে হয়, যত ভাবনা ছিল, লক্ষ্য ছিল মনে, সেসবের কতটুকুই-বা করতে পেরেছি- যদিও শুনে আসছি মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়; কেউই তার স্বপ্নের চেয়ে ছোট নয়। তো, এই যে ক্যানভাস, ২০০৫ থেকে আজ অব্দি আপনাদের হাতে প্রতি মাসে পৌঁছে যাচ্ছে- এরও শুরু ছোট্ট এক জায়গা থেকে। শাব্দিক অর্থেই ছোট : আমার বসতবাড়িরই একটা ঘর, তাতে কয়েকজন মাত্র কর্মী, তার চেয়েও কম আসবাব আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সবকিছু এত অল্প, কিন্তু স্বপ্ন কত বিশাল! দিনে দিনে, একটু একটু করে তা পাখা মেলেছে, প্রসারিত করেছে তার আকাশ। আপনারা তাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাড়া দিয়েছেন বলেই না আজ এত দূর আসা হলো। এ পথে চড়াই-উতরাই স্বাভাবিক; কিন্তু সততা, একাগ্রতা ও শ্রমে যদি ফাঁক না থাকে- পৃথিবীতে কিছুই অসাধ্য নয়।
কেমন করে ছোট্ট একটা কোণ থেকে পৃথিবী বদলে যায়? এই অভিজ্ঞতা আমার কিঞ্চিৎ হয়েছে বৈকি! যা কিছু আমরা করতে চাই বা করবো বলে ভাবি, তা কতটা নতুন আর বাস্তবসম্মত- দেখা জরুরি, অন্তত স্থান-কাল সম্পর্কে একরকম ধারণা থাকতে হয়। এই যেমন ক্যানভাস প্রকাশের ভাবনা যখন মাথায় এলো, তখন বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফ্যাশন, সৌন্দর্যচর্চা, দৈনন্দিন জীবনধারা নিয়ে একধরনের নিয়মিত আয়োজন ছিল। সেসবের পাঠকচাহিদাও ছিল। কিন্তু এগুলো ছিল পত্রিকার অন্যান্য বিভাগের মতোই একটা অংশ মাত্র, সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটি দিনের জন্য। এগুলোর পাঠকই ছিলাম আমি, এখনো আছি। সময়ের সঙ্গে না থাকলে যে সমকালীন মানুষ হওয়াই সম্ভব নয়! যা হোক, পত্রিকার নির্দিষ্ট দিনের এই অংশগুলো পড়তে পড়তে ভাবনায় এলো- কেমন হয়, এমন একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে পারলে, যাতে ফ্যাশন, রূপসৌন্দর্য, লাইফস্টাইল- সবই দুই মলাটের মধ্যে থাকবে! এমন সব বিষয়, যা নতুন; পুরোনো হলেও নতুন আঙ্গিকে প্রয়োজনীয় করে উপস্থাপন করা যায়! নেমে পড়লাম কাজে। ওই যে, শুরুতে বলেছিলাম, ছোট্ট একটা জায়গা থেকে- ধীরে ধীরে জায়গাও ছোট থাকেনি। ক্যানভাস তো হয়েই উঠলো বড়, আপনাদের চোখের সামনে, আপনাদেরই পরিপূর্ণ, উদার ও অকৃত্রিম সহযোগিতায়। প্রতিবছর ম্যাগাজিনটি বদলে যায় আঙ্গিক ও বিষয়বৈচিত্র্যে, প্রসারিত হয় কলেবর। বিভিন্ন উৎসবে তো আমরা থাকি আপনাদের সঙ্গে, বর্ধিত আয়োজনে নানা প্রয়োজনীয় ও মনোমুগ্ধকর বিষয়-আশয় নিয়ে।
কী করে ক্যানভাস এত দূর এলো? আপনারা পাশে ছিলেন, তা খুব বড় একটা কারণ। আর আমার সার্বক্ষণিক সহকর্মীদের মেধা, সৃজনশীলতা, শ্রম, আবেগ, দক্ষতা- সব এক বিন্দুতে যোগ না হলে কেমন করে সম্ভব হতো? তারা তো কেবল সহকর্মী নন- সঙ্গী, বন্ধু, সতীর্থ। ক্যানভাস শুরু থেকেই একটা পরিবার।
আমরা আরও পথ চলতে চাই। আরও দূর যেতে চাই। রবার্ট ফ্রস্টের বিখ্যাত সেই কবিতা ‘স্টপিং বাই উডস অন আ স্নোয়ি ইভনিং’য়ে যেমন ব্যক্ত হয়েছে-
‘এ-প্রতিজ্ঞা তবু সঙ্গে রাখি আমি,
ঘুমোবার আগে যেন একটুও না থামি।’