ফিচার I মৃন্ময়ী রূপের পাড়া
চিন্ময়ীকে খড়-বাঁশ-মাটি-রঙে মৃন্ময়ী করে তোলার উদ্দেশ্য অরূপের মধ্যে রূপের সন্ধান। প্রতিমাশিল্পী বা মৃৎশিল্পীরা অতীন্দ্রিয় চিন্ময়শক্তিকে লৌকিক করে তোলেন, পূজা উপলক্ষে কুমোরপাড়া বা কুমোরটুলি হয়ে ওঠে মৃন্ময়ী রূপের পাড়া। বাংলায় দুর্গাপ্রতিমা, দুর্গাপূজা থেকে শুরু করে কলকাতার কুমোরটুলি ইত্যাদি নিয়ে লিখছেন অতনু সিংহ
বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী অথবা অজ্ঞেয়- যা-ই হই না কেন, আমরা জানি উৎসবের একটা গন্ধ থাকে। সেসবের সূচনা ধর্মীয় প্রকরণ থেকে হলেও সমাজের যৌথযাপনে সেই সব উৎসব যত না ধর্মীয়ভাবে প্রকাশিত হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে ওঠে লৌকিক। নানা কারণেই লোকসম্পৃক্ত উৎসবের আলাদা আলাদা গন্ধ থাকে, রঙ থাকে। দুর্গাপূজারও এমন এক গন্ধ আছে, হয়তো তা শরতের কাশশুভ্র প্রকৃতির, অথবা আমাদের নিজস্ব মাটির, যাপনভূমির, নদীমাতৃক সমাজের… কেননা, যে একান্ত মাটিতে আমাদের বেড়ে ওঠা, ঘর-সংসার, কৃষিনিবিড় সমাজ, নদীর গর্ভ- সে মাটি থেকেই পুরাণের অলৌকিক দেবীবর্ণনাকে লৌকিক করে তোলেন মৃৎশিল্পীরা। সন্তানসম স্নেহে ও মমতায় প্রতিমাগুলোকে গড়ে তোলেন মৃন্ময়ী রূপের কারিগরেরা। দুর্গাপূজার একটা গন্ধ আছে, তা মাটিরই। সেই গন্ধে কুমোরপাড়া বা কুমোরটুলি হয়ে ওঠে মৃন্ময়ী এক রূপের পাড়া।
তবো অচিন্ত্য রূপচরিত মহিমা
পৌরাণিক মেটাফিজিকসের অলৌকিক দেবীর লৌকিক রূপান্তর ঘটে মৃৎশিল্পীদের হাতে। কিংবা যে অচিন্ত্য নিরাকার চিন্ময়ের কথা প্রায় সব ধর্মীয় শাস্ত্রের মূলগত ঐক্য, সেই অনির্ণেয় জগৎকে নিজেদের মতো করে মূর্ত করে তোলার চেষ্টায়, টোটেম নির্মাণের চেষ্টায় যারা খড়-বাঁশ-মাটি-রঙে মগ্ন হন, তাদের আমরা কুমোর নামে চিনি। তাদের কর্মমুখরতার ওপরই নির্ভর করে শারদোৎসব। অর্থাৎ, চিন্ময়ী রূপের জন্ম দেন যিনি, তিনি রক্তমাংসের মানুষ। কুমোর পাড়ায় অব্যক্ত কল্পনার প্রকাশ আমাদের ঘর-গেরস্থালি আর এই লোকজীবনের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে। প্রকাশিত সেই রূপ পুরাণের চন্ডী নন, বরং আমাদের ঘরের উমা।
চিন্ময়ী ভাবের আকার পুরুষ নাকি প্রকৃতি, তা অনির্ণেয়। কারণ, চৈতন্য ও প্রজ্ঞার লিঙ্গভেদ হয় না। কিন্তু নিরাকার চৈতন্যের যখন প্রকাশ হয় চিন্ময়ী থেকে মৃন্ময়ী রূপে, তখন সে আকার মানুষেরই মতো। আর অচিন্ত্য চিন্ময়ী যখন মৃন্ময়ী রূপে প্রকাশ পায়, তখন মৃন্ময়ী ভাবই হয়ে ওঠে চিন্ময়ী রূপের আকার, অর্থাৎ সে পুরুষ না প্রকৃতি, সে বিষয়ে আমরা আমাদের ধারণাকে মূর্ত করি। শাক্ত কবি এই মৃন্ময়ী রূপের উদ্দেশে বলছেন, ‘আমার চেতনা চৈতন্য করে দে মা চৈতন্যময়ী…’ কারণ চৈতন্যে পৌঁছানোই সাধকের লক্ষ্য, কিন্তু তিনি যখন লোকজগতের তখন তাঁর মাধ্যম আকার। আবার ফকির লালন সাঁইয়ের প্রশ্ন, ‘বেদে নাই যার রূপরেখা, পাবে সামান্যে কি তাঁর দেখা?’- এই অচিন্ত্য চিন্ময় ভাবকে লৌকিক জগতে মানুষের মতোই সহজ আকারে দেখার চেষ্টা চলে, তাতে অরূপ হয়ে ওঠে রূপমহিমান্বিত। বিমূর্ত-নিরাকার চৈতন্যকে প্রতীক, রূপকল্প, পুরাণগাথার মিশ্রণে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট আকার, তা একাদিক্রমে কল্পনা ও প্রতীকের আশ্রয়ে যেমন পরাবাস্তবিক, তেমনই কল্পনার নির্দিষ্ট প্রকাশের মাধ্যমে লৌকিক। এর মাধ্যম মৃৎশিল্পীদের হাতের কারুশিল্প। কুমোরটুলি বা কুমোরপাড়া সেই শিল্পেরই এলাকা।
পূজা ও প্রতিমা
বাংলায় (দুই বাংলা মিলিয়ে) প্রতিমা নির্মাণের ইতিহাস খুব পুরোনো। কারণ, এই ভূখন্ডের পুরাতাত্ত্বিক ও লোকশিল্পের সংগ্রহশালাগুলোর হাজার বছরের পুরোনো কাঠ ও পোড়ামাটির প্রতিমা সংরক্ষিত। এর থেকেই বোঝা যায়, পুতুল, ভাস্কর্য ও প্রতিমা নির্মাণের ট্র্যাডিশন অনেক পুরোনো। লৌকিক ধর্মগুলোর ক্ষেত্রেও প্রতিমা নির্মাণের একটা ধারা যে ছিল, তা লোকসাংস্কৃতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়। বাংলার প্রাচীন কালীপূজার ক্ষেত্রে প্রতিমা গড়ার ট্র্যাডিশন বহু প্রাচীন। কারণ, নৃতাত্ত্বিকভাবে আর্য আগমনের অনেক আগে থেকেই কৃষিনিবিড় মাতৃতান্ত্রিক বাংলার নিজস্ব দেবী ছিল কালী, আর দুর্গার ধারণা আর্যদের হাত ধরে। দুর্গাপূজায় দেবী প্রতিমার নির্মাণ বাংলায় গৃহস্থের গৃহে উমার আরাধনার মধ্য দিয়ে। কালী যেখানে প্রান্তজনের, ভূমিহীনের দেবী হিসেবে সাংস্কৃতিকভাবে জনপ্রিয় হয়েছিলেন, দুর্গা সেখানে মূলত উচ্চবিত্ত সামন্ত বা জমিদার পরিসরে আরাধ্য হয়ে উঠেছিলেন। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৫১০ সালে কোচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কোচবিহারে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। ১৬১০ সালে কলকাতার বরিশার রায় চৌধুরী পরিবার প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। আবার এটাও সত্য যে ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর কলকাতায় বাবুরা ব্রিটিশদের মনঃতুষ্টি করতে গিয়ে দুর্গাপূজাকে ঘিরে খানা-পিনা-নাচ-গান ইত্যাদি সহযোগে আড়ম্বরপূর্ণ উৎসবের সূচনা করেন। বাংলার উচ্চবিত্তের গৃহে দুর্গাপূজায় প্রতিমা নির্মাণ হতে থাকলো ঠাকুরদালানে, একচালার অর্থাৎ একটা চালচিত্রের মধ্যে দুর্গা, মহিষাসুর, লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী ও কার্তিকের প্রতিমা, আর তাঁদের বাহনেরা… প্রতিমা নির্মাণের নিয়ম হচ্ছে রথযাত্রার দিন থেকে কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করা। তারপর তাতে খড় বেঁধে, খড়ে মাটি লেপে, চুন ও রঙ করে, কেশ ও সাজসজ্জার মাধ্যমে মহাষষ্ঠীর আগে প্রতিমাকে জাগতিকভাবে প্রকাশ করা হয়। আর প্রতিমার চক্ষুদান করা হয় মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের লগ্নে। এই নিয়ম মেনেই বাড়ির পূজাগুলো হয়ে আসছে। সেখানে প্রতিমাশিল্পীরা ঠাকুরদালানে প্রতিমা নির্মাণ করেন। ১৭৯০ সালের দিকে এই পূজার আমেজে আকৃষ্ট হয়ে আজকের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়াতে ১২ জন বন্ধু মিলে টাকাপয়সা সংগ্রহ করে প্রথম সর্বজনীনভাবে বড় আকারে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন, যা বারোইয়ারি বা বারো বন্ধুর পূজা নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। পরে এই ধরনের পূজার নাম হয় বারোয়ারি দুর্গাপূজা। এর হাত ধরেই উচ্চবিত্তের গৃহকোণ থেকে বের হয়ে দুর্গাপূজা হয়ে ওঠে প্রাথমিকভাবে সকল বাঙালি হিন্দুর। পরে ধর্মীয় সীমানা পেরিয়ে যখন তা লোকজীবনে ব্যাপ্ত হয়, তখন ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এই উৎসবে সব বাঙালির অংশগ্রহণ ব্যাপক হতে থাকে। ফলে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কুমোরটুলি। বারোয়ারি দুর্গাপূজা ও কুমোরটুলির হাত ধরে শারদোৎসব হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের উৎসব। আর্যের দেবী নয়, বরং গিরিরাজের কন্যা উমাকে বাংলার মানুষ তার নিজের ঘরের মেয়ে হিসেবে বরণ করে নেয়।
মৃন্ময়ী রূপের পাড়া কুমোরটুলি
পুরাণের স্ত্রোত্র ‘রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি…’ অর্থাৎ, ‘হে দেবী, তুমি মহিষাসুরমর্দিনী। আবার তুমিই ভক্তগণে সুখ প্রদান করে থাকো। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ পরমাত্মবস্তু, জয় অর্থাৎ বেদ ইত্যাদি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং যশ অর্থাৎ শাস্ত্রজ্ঞের খ্যাতি প্রদান করো। তুমি আমার কাম, ক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলোকে নাশ করো।’ এই রূপ অর্থাৎ পরমবস্তুর প্রার্থনা করা হয়েছে যে দেবীর কাছে, সেই দেবীকেই কুমোরটুলিতে রূপ বা আকার দান করা হয়। শারদোৎসব ঘিরে মায়ায় ভরে ওঠে প্রতিটি প্রতিমাশিল্পীর স্টুডিও। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতেই কুমোরটুলি বা প্রতিমাশিল্পীদের এলাকা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পুরান ঢাকার কুমোরটুলি, সাভার, চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকা, ফিরিঙ্গি বাজার, গোসাইল, রহমতগঞ্জ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। নারায়ণগঞ্জেও প্রতিমা নির্মাণের ব্যাপক চল রয়েছে। তবে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমাশিল্পীদের আখড়া পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার কুমোরটুলি। কলকাতার উত্তরে বিরাট এলাকাজুড়ে রয়েছে এই কুমোরটুলি। শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গেই নয়, গোটা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিমা যায় এই এলাকা থেকে। এমনকি ঢাকার অনেক সবর্জনীন পূজা কমিটি তাদের পূজামন্ডপে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা আমদানি করে। কলকাতার কুমোরটুলি থেকে শুধু গোটা উপমহাদেশে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়, এমনটা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার কুমোরটুলি থেকে। তবে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে বহির্বিশ্বে যেসব প্রতিমা পাঠানো হয়, সেগুলোর অধিকাংশ মাটির নয়। ফাইবার, থার্মোকল, কাঠ, প্লাস্টার অব প্যারিসে তৈরি। কলকাতার কুমোরটুলি থেকে প্রতিবছর ব্রিটেন, আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালি, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, এমনকি দুবাইতেও প্রতিমা পাঠানো হয়।
কলকাতার কুমোরটুলির ইতিহাস ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্রিটিশদের আগমনের আগে কলকাতা ছিল অজপাড়াগাঁ। সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও ডিহি- এসব গ্রাম ছিল নবাবের শাসনাধীন। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করার পর ব্রিটিশদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় উপমহাদেশে পাকাপাকিভাবে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিস্তারের কাজ শুরু করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গোবিন্দপুর গ্রামে তাদের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর জন্য সেখানকার বাসিন্দাদের স্থানান্তর করা হয় সুতানুটি অঞ্চলে। তবে গোবিন্দপুরে যেসব উচ্চবিত্ত বসবাস করতো, তারা নতুন করে পাথুরিয়াঘাটা ও জোড়াসাঁকো অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। এই প্রক্রিয়ার ভেতরেই গড়ে ওঠে আরও কয়েকটি অঞ্চল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকর্তাদের আদেশ অনুসারে জেফানিয়া হলওয়েল কোম্পানির মজুরদের বসবাসের জন্য পৃথক পৃথক অঞ্চল বণ্টন করেন। গ্রামগুলো ঔপনিবেশিক কলকাতায় বিভিন্ন পেশাভিত্তিক পাড়া বা মহল্লায় বিভক্ত হয়। এভাবেই গড়ে ওঠে শুঁড়িপাড়া, কলুটোলা, ছুতারপাড়া, আহিরীটোলা ও কুমোরটুলি। ব্রিটিশ উপনিবেশের হাত ধরেই উত্তর ও মধ্যভারত থেকে কলকাতায় আগত বানিয়া ও হিন্দুস্তানিরা বাঙালিদের ব্যাপক এলাকা দখল করে নেয়, তাদের মুক্তাঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠে বড়বাজার। এই আগ্রাসনের শিকার হয়ে উত্তর কলকাতার মৃৎশিল্পীরা শহর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু থেকে যান কুমোরটুলির পটুয়ারা। তারা মূলত গঙ্গামাটি সংগ্রহ করে মাটির পাত্র তৈরি করতেন। বানিয়া ও ব্রিটিশদের অত্যাচারের মুখেও কোনোক্রমে তারা টিকে যান। পরবর্তীকালে উচ্চবিত্ত বাবু বাঙালিদের বাড়ির পূজার প্রতিমা নির্মাণ শুরু করেন। এরপর সর্বজনীন দুর্গাপূজার সূচনা হলে কলকাতা ও বাইরের পূজা কমিটিগুলো কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা সংগ্রহ শুরু করে। এটি হয়ে ওঠে প্রতিমানির্মাণের জন্য উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় অঞ্চল। ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের রাজনৈতিক পটবদলের ফলে পূর্ব বাংলা বা আজকের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিক্রমপুর থেকেও বেশ কিছু প্রতিমাশিল্পী পেশা ও বসবাসের জন্য হাজির হন কলকাতার কুমোরটুলিতে। কলকাতার কুমোরটুলি ক্রমে হয়ে ওঠে দুই বাংলার প্রতিমা নির্মাণ শিল্পের কেন্দ্রস্থল।
প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে কলকাতার এই কুমোরটুলি উমা বা পার্বতীর আগমন উপলক্ষে তাঁর রূপনির্মাণে হয়ে ওঠে জমজমাট। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর কালী, লক্ষ্মী, সরস্বতী, জগদ্ধাত্রী, শিব, কৃষ্ণ, মনসা প্রভৃতি দেবদেবীর পূজার প্রতিমা নির্মাণের কাজও হয় এখানে। তবে দুর্গাপ্রতিমা নির্মাণের আয়োজন চোখে পড়ার মতো। দেশ-বিদেশ থেকে ফটোগ্রাফাররা ছবি তোলার জন্য হাজির হন কলকাতার কুমোরটুলিতে। চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে সিনেমা পার্টিরও আনাগোনা চোখে পড়ে এই এলাকায়। কিন্তু যখন দুর্গাপূজা শুরু হয়, তখন অদ্ভুত নীরবতা আর শূন্যতা তৈরি হয় এখানে। মা কিংবা মেয়ের মতো যত্নে যে প্রতিমা নির্মাণ করেছেন প্রতিমাশিল্পীরা, কুমোরটুলির শিল্পীদের স্টুডিও অথবা গৃহ থেকে সেই সব প্রতিমা ততক্ষণে মন্ডপে, তাই এই শূন্যতা। এর মধ্যেই তারা দিন গুনতে থাকেন পরের বছরের, উমার উদ্দেশে তারা মনে মনে বলেন, ‘আসছে বছর আবার হবে’। পরের বছর ফের চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ী করে তোলার অপেক্ষায় দিন যায় কুমোরটুলিতে, কুমোরপাড়ায় মৃন্ময়ী রূপকে কেন্দ্র করে মায়ায় ভরে ওঠে তাদের সংসার।
ছবি: সৈকত মল্লিক