সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিরাপত্তা ও সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে নতুন ক্যাম্পেইন ‘আমার আইডি, আমার নিরাপত্তা’র যাত্রা শুরু হয়েছে। বিজ্ঞাপনী সংস্থা ব্ল্যাকবোর্ড ও ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশনের (ক্রাফ) যৌথ প্রযোজনায় গতকাল ৭ আগস্ট বনানীর যাত্রাবিরতি রেস্তোরাঁয় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই বছরব্যাপী ক্যাম্পেইনের ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রাফের সভাপতি জেনিফার আলম, ফ্যাশন ব্লগারদের সংগঠন ম্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নম্রতা খান, মডেল আজরা মাহমুদ, ক্যাম্পেইনের আহ্বায়ক শাখাওয়াত আলম রনো ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সাইমুম রেজা পিয়াস। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সর্বস্তরের মানুষ। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় যেমন ফ্যাশন ব্লগার, সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট, উদ্যোক্তা, সোশ্যাল ওয়ার্কার, আইনজীবী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, শিক্ষার্থীসহ অনেকে।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিরাপত্তা সেই সঙ্গে অন্যান্য সাইবার নিপীড়নের শিকার এমন অনেক মানুষই পাওয়া যাবে। হয়তো সকালে উঠে দেখছেন আপনি নিজেই নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইলে ঢুকতে পারছেন না। হ্যাক হয়ে গেছে এবং সেই সঙ্গে আপনার প্রোফাইল থেকেই আপনার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনকেও বিরক্ত করা হচ্ছে বা টাকা চাওয়া হচ্ছে কিংবা বাজে বাজে পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেককেই পড়তে হয়েছে। কেউ কেউ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আগের আইডি উদ্ধার করতে পেরেছেন। আবার কেউ কেউ পারেননি, নতুন আইডি খুলেছেন। এ বিষয়টা অনেকের জন্য হতাশারও। বিষয়টি মাথায় রেখেই সচেতনতা তৈরিতে পদক্ষেপ নিয়েছে ব্ল্যাকবোর্ড।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য দেন ক্রাফের সভাপতি জেনিফার আলম। তিনি বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন হয়রানিমূলক ঘটনা তুলে ধরেন, সেই সঙ্গে ক্রাফ সে ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করছে, সে বিষয়ে বক্তব্য দেন। এরপর ফ্যাশন ব্লগারদের পক্ষ থেকে ম্যাবেব-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, গ্লিটজ অ্যান্ড গ্লিটারজ ও হিজাবিয়াস্তা ফ্যাশনিয়াস্তার কর্ণধার নম্রতা খান বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে এমন অনেক মেকআপ আর্টিস্ট আছেন, যারা তাদের অধিকাংশ কার্যক্রম অনলাইনে চালিয়ে থাকেন। তাদের জন্য এটি একটি বড় হুমকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্ল্যাকবোর্ডের মতো এমন সচেতনতামূলক পদক্ষেপ সত্যিই অনেক দরকার ছিল এবং শুরু থেকেই এ ক্যাম্পেইনের সঙ্গে থাকতে পারছি, এ জন্য নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবতী মনে করছি। ‘ এ ছাড়া কোরিওগ্রাফার ও মডেল আজরা মাহমুদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার বান্ধবী বুলবুল টুম্পাকে নিয়ে এসেছিলেন, যার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি হ্যাক হয়ে গিয়েছিল এবং তা তিনি উদ্ধার করতে পারেননি।
আজরা মাহমুদ বলেন, ‘এখনকার সময়ে এমন সচেতনতা খুবই প্রয়োজন এবং কীভাবে একজন তার ব্যক্তিগত আইডি পুনরায় উদ্ধার করতে পারবে, সে বিষয়ে জানা খুবই প্রয়োজন বলে মনে করেন। এরপর বক্তব্য দেন ক্রাফের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সাইমুম রেজা পিয়াস। তিনি আইডি হ্যাক হয়ে গেলে করণীয় সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
সাইবার হয়রানির শিকার নুসরাত জাহান জিসাও বক্তব্য দেন। তিনি বিজেন্সর সহপ্রতিষ্ঠাতা। শুরুতে খোঁপার কাঁটার মধ্যে এবং পরবর্তীকালে টি-শার্টে ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ লিখে যৌন হয়রানি বন্ধে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে বাসে তোলা কিছু প্রতীকী ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আলোচনায় আসেন । তিনি জানান, এসব ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর শুরুতে অনেক প্রশংসা পেলেও পরবর্তী সময়ে টি-শার্ট গায়ে মেয়েদের ছবি দেওয়ার কারণে তাদের অনেক কটুকথা ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন পেজে তাদের ছবিগুলো এডিট করে ট্রল করা হয়েছে। তারা আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলেও পিছিয়ে আসেন। কারণ তারা আশঙ্কা করেছিলেন, এতে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজটি নিরাপত্তাজনিত হুমকির মুখে পড়তে পারে।
সবশেষে আমার আইডি, আমার নিরাপত্তা ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য-সংক্রান্ত বক্তব্য দেন ক্যাম্পেইনের আহ্বায়ক ও ব্ল্যাকবোর্ডের সদস্য শাখাওয়াত আলম রনো। ক্যাম্পেইনটি সফল করতে তিনি সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সাইবার হ্যারেসমেন্ট থেকে যাতে সবাই মুক্ত থাকতে পারেন, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে তার সব রকম সহযোগিতা করবে ব্ল্যাকবোর্ড।
এ পুরো অনুষ্ঠানের টেকনিক্যাল পার্টনার ছিল ক্রাফ। ইভেন্ট পার্টনার যাত্রা বিরতি ও রিভ অ্যান্টিভাইরাস এবং ক্যাম্পেইনের পাশে আছে ম্যাবেবসহ ফ্যাশন ব্লগার, সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট, উদ্যোক্তা, সোশ্যাল ওয়ার্কার, আইনজীবী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, শিক্ষার্থী প্রমুখ।