ক্যানভাস রিপোর্ট
রাজধানীর ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে চলছে মিনিয়েচার-সুলভ দলীয় শিল্প প্রদর্শনী ‘ডুব ২.০’। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, শনিবার উদ্বোধন হয় এর।
উদ্বোধনী দিনে আয়োজিত শিল্পকথনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান শিল্পী সঞ্জয় চক্রবর্তী এবং ডেপার্ট আর্ট ম্যাগাজিনের সম্পাদক শিল্পী মোস্তফা জামান।
চিত্রশিল্পী আজিজি ফাওমি খান প্রবর্তিত এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন দেশের ১৪ জন তরুণ উদীয়মান শিল্পী। প্রদর্শিত শিল্পসমূহের বিষয়বস্তু শহরের মাটিতে জীববৈচিত্র্যের অবস্থানকে নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী পর্যালোচনা।
ক্যানভাসকে আজিজি ফাওমি খান বলেন, “‘ডুব’-যাত্রা শুরু ২০২০ সালে, করোনা মহামারিতে পুরো পৃথিবী যখন ভীষণ এক অনিশ্চয়তায় ডুবে আছে। মানসিকভাবে আমরা বিধ্বস্ত হয়ে পড়লেও প্রকৃতি যেন ধীরে ধীরে আপন মহিমায় ফিরতে শুরু করেছিল, মানুষের পদচিহ্ন আর কর্মব্যস্ততায় বিঘ্ন ঘটায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১০ জন নবীন শিল্পী তখন একটি ভার্চুয়াল প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।”
“আজ দু বছর পেরিয়ে, মানবজাতি অনেকটাই মহামারিকে কাটিয়ে উঠেছে। আমার শহরের রাজপথ তাদের কর্মব্যস্ততায় চঞ্চল হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে আবার যেন প্রকৃতি কেমন অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে! মানুষ আবার ধুসর শহরে চোখ সয়ে নিয়েছে। তাই ডুব-এর দ্বিতীয় পর্বে, যখন কাজগুলো সরাসরি প্রদর্শিত হচ্ছে, বিষয়বস্তু হিসেবে এসেছে শহর এবং শহরে বিদ্যমান জীববৈচিত্র্য, যেখানে মানুষের পাশাপাশি আরও নানা পশু-পাখি-পতঙ্গ-উদ্ভিদের বাস, দৈনন্দিন জীবনে যারা প্রায়শ আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। তাদের উপস্থিতি, কোনোমতে শহরের কোণে টিকে থাকা, প্রকৃতিকে সুস্থ রাখতে, শহরের বাতাসকে একটু শুদ্ধ করে তুলতে অবদান– এমন কোন বিষয়েই আমরা সচেতন নই,” যোগ করেন আজিজি।
তিনি আরও বলেন, ‘নদী তীরবর্তী এই শহরে একটা সময় নানা পশুপাখির বিচরণ ছিল। বন্যভূমির অভাবে এবং শহুরে জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে আজ অনেক পশুপাখি বিলুপ্ত। কিন্তু এর মাঝেও জীববৈচিত্র্যের যে অংশটুকু টিকে আছে তারা যেন অনেকটা চোখের আড়ালেই রয়ে যায়। তাদের সঙ্গে শহুরে নাগরিকদের যোগাযোগ খুবই সীমিত।’
‘ছেলেবেলায় গ্রাম্যজীবনে নানান প্রাণী ও উদ্ভিদের মাঝে কাটানো সময় যেমন বড়বেলার শহুরে নাগরিকরদের স্মৃতিকাতর করে ফেলে, তেমনি শহরকে বাসযোগ্য করে ধরে রাখতে তাদের প্রয়োজনীয়তা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। বিলুপ্ত এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের নিয়ে নানান ভাবনা-কল্পনা, কিংবদন্তি ও বাস্তব অভিজ্ঞতাকে সরাসরি বা রূপক অর্থে নিয়ে কাজ করেছেন শিল্পীরা,’ বলেন আজিজি ফাওমি খান।
এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন আফরোজা হোসেন সারা, আফসানা হক আয়ান, অনন্যা মেহপার আজাদ, আরঝিনা আহসান, অন্তরা মেহরুখ আজাদ, জয়শ্রী চাকমা, মৃৎমন্দির গুঞ্জন কুমার রায়, মুক্তা মারিয়াম খান, নুসরাত জাহান তিতলী, রাকিবুল আনোয়ার, সারা জাবীন, শৈলী শ্রাবন্তি ও তানিয়া রহমান রশ্নি।
প্রদর্শনীতে সারা এবং তিতলীর কাজে যেমন বিলুপ্তপ্রায় লেকের বক বা মৌমাছিদের গল্প আছে, তেমনি মৃৎমন্দিরের কাজে আমাদের অতিপরিচিত সারমেয় সম্প্রদায়ের গল্প দেখতে পাই। অনন্যা, মুক্তা এবং শৈলীর কাজে এ অঞ্চলের কিংবদন্তি, লোকগাঁথা আর পৌরাণিক উপাদানের মিশেল, অন্তরা ও রাকিবের কাজের বিমূর্ততা– প্রদর্শনীর বিষয়বস্তুকে রূপক অর্থে বয়ান করে। জয়শ্রী, আরঝিনা, রশ্নি এবং আয়ান যেমন দৃশ্যমান প্রাকৃতিক উপকরণ নিয়ে কাজ করেছেন, জাবিন আদি থেকে বর্তমানে মানুষ ও প্রকৃতির উদ্ভবের অসামঞ্জস্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আজিজি বলেন, ‘প্রদর্শিত সকল কাজের মিনিয়েচার-সুলভ আকার যেমন আমাদের শিল্পীদের কাজ করবার সুযোগ ও স্থান স্বল্পতাকে কাটিয়ে ওঠার প্রয়াস পায়, তেমনি রূপক অর্থে শহরের ঘেরাটোপে প্রকৃতির বেড়ে ওঠবার পরিসরের স্বল্পতাকেও নির্দেশ করে।’
দুটি এনিমেশন, দুটি নিউ মিডিয়া ভাস্কর্য, একটি ইন্সটলেশন আর্ট এবং বেশকিছু বিভিন্ন মাধ্যমে রচিত চিত্রকর্মসহ মোট ২৪টি শিল্পকর্ম চোখে পড়বে এখানে।
শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকলের জন্যে উন্মুক্ত প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকবে।