মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম রিটজ-কার্লটন রিজার্ভ হিসেবে সৌদি আরবের উম্মাহাত দ্বীপে সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে নুজুমা নামের একটি প্রাইভেট আইল্যান্ড। এটি লোহিত সাগরের মাঝে ব্লু হোল ক্লাস্টার অব আইল্যান্ডস দিয়ে ঘেরা স্থানে অবস্থিত। এই দ্বীপে পানির নিচে আছে আদিম প্রবাল প্রাচীর আর মাথার ওপরে তারা ঝলমলে আকাশ। ‘নুজুমা’ নামটি এসেছে ‘তারা’ শব্দের আরবি অর্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
রিটজ-কার্লটন, সেন্ট রেজিস এবং বুলগারি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস-এর এসভিপি জেনি বেনজাকুয়েন বলেন, ‘পর্যটকেরা প্রতিনিয়তই পৃথিবীর নতুন নতুন জায়গা আবিষ্কার করতে উৎসাহী হচ্ছেন। এমন সময়ে লোহিত সাগরের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নতুন রিটজ-কার্লটন রিজার্ভ চালু করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। এই বিলাসবহুল অবকাশযাপন কেন্দ্রটিতে দর্শনার্থীরা চমৎকার সব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।’
সৌদি আরবের পশ্চিম উপকূলে বিলাসবহুল পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে একটি লোহিত সাগর। পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম প্রবালপ্রাচীর এবং ৯০টিরও বেশি অনাবিষ্কৃত দ্বীপ সম্বলিত দ্বীপপুঞ্জ দিয়ে এই এলাকা বেষ্টিত। যেখানে দর্শনার্থীরা স্নরকেলিং ও স্কুবা ডাইভিংয়ে অংশ নিয়ে যেতে পারবেন। পাঁচ হাজার বছরের বেশি পুরোনো প্রবাল দিয়ে গঠিত প্রবালপ্রাচীরযুক্ত এই এলাকায় আরও আছে ১৬৫টির বেশি প্রজাতির স্থানীয় মাছ, ডলফিন, সামুদ্রিক কচ্ছপ, স্টিং রে এবং নেপোলিয়ন রেসে।
এই দ্বীপের তীর ম্যানগ্রোভ বনে বেষ্টিত, যা বিশ্বের অন্যতম উৎপাদনশীল ইকোসিস্টেম হিসেবে পরিচিত। তীরবর্তী অঞ্চল ভ্রমণের সময় দর্শনার্থীদের চোখে পড়বে নানা ধরনের সামুদ্রিক পাখি, প্রাণী এবং হাভালি গিটারফিশ।
এই প্রাইভেট আইল্যান্ডটির ডিজাইন করেছে ফস্টার অ্যান্ড পার্টনারস। দ্বীপ সজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে সমুদ্র আর বালির টোনমিশ্রিত প্রাকৃতিক উপাদান এবং এখানকার ডিজাইন মোটিফের অনুপ্রেরণায় জ্যামিতিক প্যাটার্ন। এখানে ব্যবহৃত আরবীয় শিল্পকর্ম, ঐতিহ্যবাহী সিরামিক, সৌদি প্যাটার্নের হাতে বোনা পাটি আর ওয়াল হ্যাঙ্গিংয়ের মধ্য দিয়ে স্থানীয় কারুশিল্পের পরিচয় ফুটে ওঠে। প্যাভিলিয়নযুক্ত পথ আর ভিলার মধ্যবর্তী পথের দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে সৌদির স্থানীয় গাছপালার সারি।
আগত দর্শনার্থীরা চার্টার্ড বোট কিংবা সিপ্লেনে চড়ে নুজুমাতে যেতে পারবেন। এখানকার ৬৩টি ওভারওয়াটার ও বিচ ভিলায় আছে এক থেকে তিনটি বেডরুম, প্রশস্ত লিভিং এরিয়া এবং সমুদ্রমুখী প্রাইভেট পুল। প্রতিটি ডেকে আছে একটি করে টেলিস্কোপ, যার সাহায্যে ভিলায় বসেই রাতের তারাভরা আকাশ উপভোগ করা যাবে। সুনীল সমুদ্রের ওপর অবস্থিত ওভারওয়াটার ভিলাগুলো একটি এলিভেটেড রিং ওয়াকওয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত। যেখান থেকে সমুদ্রের প্যানারমিক ভিউ পাওয়া যায়, আবার সরাসরি সমুদ্রের ধারেও চলে যাওয়া যায়।
প্রতিটি ভিলার সঙ্গে থাকবেন একজন ব্যক্তিগত হোস্ট। তিনি অতিথিদের সর্বাক্ষণিক সহায়তা করবেন এবং দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখাবেন। এখানে একদল স্থানীয় বিশেষজ্ঞও আছেন, যাদের কাছ থেকে পর্যটকরা সৌদি আরবের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও নুজুমার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। তা ছাড়া, আরবের যাযাবরদের জীবন ও শিক্ষাকে সম্মান জানিয়ে এখানে আছে একটি কনজারভেশন হাউস।
আরবীয় ঐতিহ্য অনুসারে, কিছু মানুষ একজনের বাড়িতে সমবেত হয়ে কবিতা, দর্শন ও বিজ্ঞান নিয়ে গল্প করে থাকেন। এই ঐতিহ্য থেকেই নুজুমা’ র ডাইনিং দর্শন অনুপ্রাণিত। রিজার্ভটির পাঁচটি ডাইনিংয়ের প্রতিটিতে উমলুজ অঞ্চলের জেলেদের সম্মান জানানো হয়েছে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এসব জেলের জীবন এই এলাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
তাবরাহ নামের ডাইনিং স্পেসটি তৈরি হয়েছে একজন জেলের বাড়ির আধুনিক সংস্করণের আদলে। এখানকার বিশেষ সি-ফুডের তালিকায় আছে ‘দ্য লাকিয়েস্ট ক্যাচ।’জামা নামের আলফ্রেসকো স্পেসটিতে রয়েছে উন্মুক্ত রান্নাঘর ও কাঠের আগুনের গ্রিলে তৈরি হালকা খাবার। রিসোর্টের আউটডোর পুল আর ক্যাবানা দিয়ে সজ্জিত সৈকতের তীরে অবস্থিত এই ডাইনিং স্পেস স্বচ্ছন্দ অভিজ্ঞতার জন্য বেশ চমৎকার।
সূর্যাস্তের সময়ে, বিশেষজ্ঞ মিক্সোলজিস্টদের তৈরি জ্যোতিষশাস্ত্র অনুপ্রাণিত খাবারের জন্য একটি একান্ত স্থান হতে পারে মাইয়া। ‘জেমিনি’নামের একটি সাইট্রাস মকটেল এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। আরবিতে আল-তাওয়ামান নামে পরিচিত এই নক্ষত্রমণ্ডলী সৌদি আরবের রাজধানী থেকে সারা বছর দেখা যায়। টেলিস্কোপ ও স্টার ডিজাইনের উপাদান নিয়ে রাতের আকাশের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এই ওপেন-এয়ার টেরেসটি সাজানো হয়েছে।
সৌদি আরবের বাজার থেকে অনুপ্রাণিত সিতা একটি ডাইনিং ভেন্যু; যা প্রশস্ত ফরাসি-স্টাইল পাতিসেরি এবং লেভানটাইন রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলেই অতিথিদের নাকে আসবে ঐতিহ্যবাহী মাটির চুলায় সদ্য বানানো রুটির সুগন্ধ। এর সঙ্গে আছে রিসোর্টের নিজস্ব মসলার ভাণ্ডারের সাহায্যে প্রস্তুত টাটকা হামুস ও অন্যান্য ডিশ।
অতিথিদের শরীর ও মনকে সতেজ করে তুলতে এই দ্বীপে আছে নেইরাহ স্পা নামক প্রশান্তিময় আশ্রম। মেডিটেশন, লুনার ইয়োগা, স্পেশাল ব্রিদিং এক্সারসাইজ ও সাউন্ড হিলিং থেরাপির মতো কার্যক্রমের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। স্থানটিতে ভাইটালিটি ও ল্যাপ পুল, একটি হাম্মাম ও একটি ফিটনেস সেন্টার রয়েছে।
নুজুমা, রিটজ-কার্লটন রিজার্ভ-এর জেনারেল ম্যানেজার টনি কোভিনি বলেন, “এই অঞ্চলের প্রথম রিটজ-কার্লটন রিজার্ভ চালু করার মাধ্যমে বিশ্বকে আমরা লোহিত সাগরের সৌন্দর্য নতুনভাবে আবিষ্কার করার দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা দিতে যাচ্ছি। নুজুমা’র সঙ্গে এই অঞ্চলের অন্য কোনো স্থানের তুলনাই হয় না। ছবির মতো সুন্দর উম্মাহাত দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে অবস্থিত বিলাসবহুল স্থাপনাটি অতিথিদের জীবন পরিবর্তনকারী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে। প্রাকৃতিক বিস্ময় ও এর সাথে সংযুক্ত হওয়ার অবারিত সুযোগে পরিপূর্ণ এই স্থানে অতিথিদের স্বাগত জানাতে আমরা বিশেষভাবে অপেক্ষা করছি।’
- ক্যানভাস অনলাইন
ছবি: নুজুমা’র সৌজন্যে