মার্ভেল কমিকসের জনপ্রিয় ভিলেন চরিত্র ক্র্যাভেন বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে পর্দায়। সনি পিকচার্সের প্রযোজনায় নির্মিত ‘ক্র্যাভেন দ্য হান্টার’ ছবিতে দেখা মিলেছে তাকে। জে সি চ্যান্ডর পরিচালিত এ ছবি নিয়ে দর্শকদের বেশ আলোচনা রয়েছে। অন্যদিকে, ডিজনির অ্যানিমেশন সিনেমা ‘মুফাসা: দ্য লায়ন কিং’ নিয়েও ভক্তদের আগ্রহের কমতি নেই। ২০১৯ সালের ‘দ্য লায়ন কিং’ লাইভ-অ্যাকশন রিমেকের এই প্রিকুয়েল নির্মাণ করেছেন ব্যারি জেনকিন্স। ডিজনির ক্লাসিক গল্পের অনুরাগীদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা দিচ্ছে এই সিনেমা। দর্শকদের জন্য সুখবর, ছবি দুটি শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর ২০২৪) একসঙ্গে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশের স্টার সিনেপ্লেক্সে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
ক্র্যাভেন দ্য হান্টার
আমেরিকান সুপারহিরো ছবি ‘ক্র্যাভেন দ্য হান্টার’। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কমিকসের পাতা থেকে সিনেমার পর্দায় উঠে এসেছে ক্র্যাভেন। সনি পিকচার্স প্রযোজিত মার্ভেল ইউনিভার্সের অংশ এই সিনেমায় ক্র্যাভেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অ্যারন টেইলর-জনসন। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন রাসেল ক্রো, আরিয়ানা ডেবোস, ফ্রেড হেশিঙ্গার, আলেসান্দ্রো নিভোলা, ক্রিস্টোফার অ্যাবোট প্রমুখ। জে সি চ্যান্ডর পরিচালিত ছবিটি স্পাইডারম্যান ছাড়াই একটি ভিলেন কেন্দ্রিক গল্প হিসেবে নির্মিত হয়েছে। মার্ভেল কমিকস ভক্তদের ছবিটি নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা গেছে।
ক্র্যাভেন দ্য হান্টার হলো মার্ভেল কমিকসের একটি জনপ্রিয় ভিলেন চরিত্র, যে স্পাইডারম্যানের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তার প্রথম আত্মপ্রকাশ ১৯৬৪ সালে দ্য অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান কমিক বইয়ে। ক্র্যাভেন, যার আসল নাম সের্গেই ক্রাভিনভিচ ক্রাভেন, একজন অভিজ্ঞানী শিকারি এবং একসময় স্পাইডারম্যানের প্রধান শত্রু ছিল। ক্র্যাভেন অত্যন্ত দক্ষ শিকারি। তার সেরা গুণ হলো শারীরিক শক্তি, ট্যাকটিক্যাল বুদ্ধিমত্তা এবং জীবিত বা মৃত প্রাণীদের ট্র্যাক করার অসামান্য ক্ষমতা। ক্র্যাভেন স্পাইডারম্যানের সঙ্গে বারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে এবং একাধিকবার তার শক্তি ও বুদ্ধির প্রদর্শন করেছে। ক্র্যাভেনের সবচেয়ে বিখ্যাত কাহিনিগুলোর মধ্যে একটি হলো ক্র্যাভেন’স লাস্ট হান্ট, যেখানে সে স্পাইডারম্যানকে পরাজিত করে এবং নিজেকে তার মতো করে পরিচিতি পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এই গল্পটি মার্ভেল কমিক্সের অন্যতম সেরা কাহিনিগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত। ক্র্যাভেন চরিত্রটি সুপারহিরোদের মধ্যে শত্রু এবং অ্যান্টিহিরো হিসেবে বহুবার উপস্থিত হয়েছে। বিশেষ করে তার ভয়ঙ্কর শিকারি মানসিকতা এবং স্পাইডারম্যানের প্রতি তার অদ্ভুত শ্রদ্ধার কারণে সমাদৃত সে।
সিনেমাটি ক্র্যাভেনের অরিজিন স্টোরি দেখিয়েছে। সের্গেই ক্রাভিনফ একজন রাশিয়ান অভিজাত পরিবারের সন্তান। তার বাবা নিকোলাই তাকে কঠোর শাসনে বড় করে, যা তার মানসিকতায় গভীর প্রভাব ফেলে। কমিকসের মতো, ক্র্যাভেন নিজেকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিকারি বলে মনে করে। সিনেমায় তার লক্ষ্য তার শিকারি নীতিকে প্রশ্ন করা এবং নিজের পরিচয়ের গভীরে যাওয়া। ক্যালিপ্সো এবং চ্যামেলিয়নের ভূমিকা তার গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, যা চরিত্রের জটিলতাকে ফুটিয়ে তোলে। সিনেমাটি পরিবেশ সংরক্ষণ এবং প্রাণীর প্রতি দায়িত্বশীলতার বিষয়েও বার্তা দেয়। ট্রেলার বা বিবরণ অনুযায়ী ক্র্যাভেনের শিকারি চরিত্রের পাশাপাশি তাকে পশুদের রক্ষক হিসেবে দেখানো হয়। ট্রেলারে বেশ কয়েকটি অ্যাকশন দৃশ্য, ক্র্যাভেনের পশুদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং একটি রহস্যময় ভিলেনের পরিচয় উঠে এসেছে। স্পাইডারম্যানের চরিত্র সরাসরি উপস্থিত রয়েছে কি না, তা না দেখলে বোঝা যাবে না!
মুফাসা: দ্য লায়ন কিং
ডিজনি’র অ্যানিমেশন সিনেমা মানেই ভক্তদের বাড়তি কৌতূহল। এবার সেই কৌতূহলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ‘মুফাসা: দ্য লায়ন কিং’। ২০১৯ সালের ‘দ্য লায়ন কিং’ লাইভ-অ্যাকশন রিমেকের প্রিকুয়েল এটি, যেখানে মুফাসার জীবনের শুরুর দিকের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন ব্যারি জেনকিন্স। যিনি তার অসাধারণ কাজ ‘মুনলাইট’-এর জন্য একাডেমি বা অস্কার পুরস্কার জিতেছিলেন।
এটি একটি মিউজিক্যাল অ্যানিমেটেড ছবি। মুফাসার চরিত্রের উত্থান ও তার রাজা হয়ে ওঠার গল্প দেখা যাচ্ছে এ ছবিতে। মুফাসা চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন অ্যারন পিয়ের। টিমন ও পুম্বার চরিত্রে বিলি আইচনার এবং সেথ রোজেন থাকছেন তাদের আগের ভূমিকায়।
ছবিটির প্লট মুফাসার শৈশব। কিভাবে এক অনাথ সিংহ থেকে প্রাইড ল্যান্ডসের মহাকাব্যিক নেতা হয়ে উঠল, সে তা তুলে ধরেছে। তার বন্ধু ও শত্রুদের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি এবং সারাজীবনের জন্য তার জীবনের দর্শন কীভাবে তৈরি হয়, সেটি এই ছবির মূল প্রতিপাদ্য। মুফাসা হলো দ্য লায়ন কিং-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র এবং আফ্রিকার সাভানায় পশুদের রাজা। সিনেমার গল্প মূলত মুফাসার পুত্র সিম্বাকে ঘিরে আবর্তিত, তবে মুফাসার চরিত্র গল্পের কেন্দ্রে গভীর ভূমিকা রাখে। মুফাসা প্রাইড ল্যান্ডসের রাজা এবং তার ভাই স্কার তাকে নিয়ে হিংসায় জ্বলছে। মুফাসার পুত্র সিম্বা ছোটবেলা থেকেই ভবিষ্যৎ রাজা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুফাসা তার সন্তানকে দায়িত্ব, ন্যায়পরায়ণতা এবং প্রাইড ল্যান্ডসের বাস্তুসংস্থান রক্ষা করার শিক্ষা দেয়। স্কার, যে গোপনে রাজা হতে চায়, একদিন ষড়যন্ত্র করে সিম্বাকে ফাঁদে ফেলে এবং মুফাসাকে একটি বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে দেয়। স্কার মুফাসাকে সরিয়ে দেয়ার জন্য জেনে-বুঝে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। মুফাসা তার সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায়। মুফাসার মৃত্যু সিম্বার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। স্কার সিংহাসন দখল করে এবং প্রাইড ল্যান্ডস দুর্দশায় পড়ে। সিম্বা পলায়ন করে এবং দুঃখের মধ্যে বেড়ে ওঠে। তবে মুফাসার স্মৃতি এবং তার দেওয়া শিক্ষা সিম্বাকে সাহস জোগায়। মুফাসার আত্মা একসময় সিম্বাকে প্রেরণা দেয় নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য এবং নিজ ভূমি উদ্ধার করার জন্য। সিম্বা তার বাবার শিক্ষা এবং সাহসিকতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রাইড ল্যান্ডসে ফিরে আসে এবং স্কারকে পরাজিত করে। মুফাসার উত্তরাধিকার এবং আদর্শে প্রাইড ল্যান্ডস আবার সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
দ্য লায়ন কিং শুধু একটি মুভি নয়; এটি ভালোবাসা, ত্যাগ, দায়িত্ববোধ, এবং পরিবার সম্পর্কে গভীর বার্তা দেয়। মুফাসা চরিত্রটি এই মূল থিমগুলোর প্রতীক। ডিজনির ক্লাসিক গল্পের অনুরাগীদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে ধরা দিচ্ছে এই সিনেমা। এ ছবির ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এবং নতুন গল্পের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করছে।
- ক্যানভাস অনলাইন
ছবি: ইন্টারনেট