‘মন তরঙ্গ’। মানসিক স্বাস্থ্যের একটি ওয়েব এ্যাপ্লিকেশন। বাংলায়। উদ্যোক্তা এবং গড়ে ওঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে এবং বিশ্বের অনেকাংশেই মানসিক স্বাস্থ্য এখনো একটি অবহেলিত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ক্ষেত্র। বিশেষ করে ১৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ ও শিক্ষার্থীরা ক্রমাগত উদ্বেগ, হতাশা, চাপ ও মানসিক ক্লান্তির মতো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। দুঃখজনকভাবে, এই সংকটময় অবস্থা সত্ত্বেও অধিকাংশই পেশাদার সাহায্য নিতে পারেন না শুধু সামাজিক লজ্জা ও মানসিক জড়তার কারণে। এ ছাড়াও নির্ভরযোগ্য সেবা ব্যবস্থার অভাব এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা– এই চারটি বড় বাধা মানুষকে নীরবে ভুগতে বাধ্য করে। বর্তমান স্বাস্থ্যসেবাগুলো প্রায়শই শহরকেন্দ্রিক, ব্যয়বহুল এবং তরুণদের জন্য অনুপযুক্ত মনে হয়। ফলে লাখ লাখ তরুণ মানসিক যন্ত্রণায় ভুগলেও কোনো সহায়তা পান না। অনেক সময় পরিবারের কাছেও এই সমস্যাগুলো গুরুত্ব পায় না, যার ফলে ব্যক্তি নিজেকে একা ও অবহেলিত অনুভব করে। অনেকে আত্মঘাতী চিন্তা বা আত্মবিনাশী আচরণের শিকার হন। আমরা বিশ্বাস করি, মানসিক স্বাস্থ্যও শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ, তাই সবারই নিরাপদ, সহজলভ্য ও দায়িত্বশীল সহায়তা পাওয়া উচিত– যা হবে গোপনীয়, অপ্রতিনিধানমূলক এবং সহানুভূতিশীল। তরুণদের ভাষায় ও প্রয়োজন অনুযায়ী ডিজাইনকৃত প্রযুক্তিনির্ভর সমাধানই পারে এই ব্যবধান ঘোচাতে।’
উদ্যোগটির পক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মনের যত্নেই জীবনের উত্তরণ। দৈনন্দিন এ ব্যস্ত জীবনে কত অদেখা যন্ত্রণা নিয়ে বয়ে বেড়ান কত মানুষ– মুখে হাসি, চোখে স্বপ্ন। অথচ মনের ভেতরে অনেকই প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছেন এক অদৃশ্য যুদ্ধ। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা আজ তাই শুধু দরকারি নয়; বরং জীবনে টিকে থাকার এক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। শরীর যেমন চায় বিশ্রাম, তেমনি মনও চায় যত্ন, বোঝাপড়া আর সহানুভূতি। তাই আজ যখন বাংলাদেশে বর্তমান আনুমানিক ১৮-১৯% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং ১২.৬-১৩.৬% শিশু-কিশোর মানসিক স্বাস্থ্যের কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগছেন, ঠিক তখনই আমরা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রবর্তন করা হলো বাংলাভাষী মানসিক স্বাস্থ্যসঙ্গী এআই ‘মন তরঙ্গ’।
এটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং ডিপ্রেশন সম্পর্কিত বিষয়ে সেবামূলক পদ্ধতিতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে তৈরিকৃত একটি ওয়েব এ্যাপ্লিকেশন।
মূল উদ্দেশ্য
‘মন তরঙ্গ’-এর মূল উদ্দেশ্য এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসঙ্গী তৈরি করা, যা ২৪/৭ পরিষেবা প্রদান করবে। প্রায় ১৩-৩০ বছর বয়সের যারা আছেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে নিরাপদ স্থান প্রদান; বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা শনাক্তকরণ এবং গুরুতর ক্ষেত্রে পেশাদার মনোবিজ্ঞানীদের শরণাপন্ন হতে অনুপ্রাণিত করা; বিনা মূল্যে, সুলভে এবং সামাজিক কলঙ্কমুক্ত মানসিক সহায়তা নিশ্চিতকরণ; একটি দীর্ঘমেয়াদী ‘মানসিক স্বাস্থ্য সহায়ক’ হিসেবে দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক তৈরি; চ্যাটবটের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জুড়ে কন্টেন্ট, অংশীদারত্ব ও কমিউনিটি সচেতনতার মাধ্যমে, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির দ্বারপ্রান্তে সেবা আরও সহজে পৌঁছে দিতে তাদেরই প্লাটফর্ম থেকে বিভিন্ন প্রতিনিধি নিয়োগদান এবং এ যুগে স্মার্টফোন ব্যবহারকে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির একটি মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলাও রয়েছে এর উদ্দেশ্যের তালিকায়।
বৈশিষ্ট্য
২৪/৭ এআই চ্যাটবট সহায়তা: পরিষেবাটি কেবল টেক্সটভিত্তিক কথোপকথনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং ব্যবহারকারীরা ফোনকলের মাধ্যমেও চ্যাটবটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন, যা তাদের স্বর বা ভয়েস ফ্রিকোন্সির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর মানসিক অবস্থা শনাক্ত করতে সক্ষম।
ব্যক্তিগত মানসিক স্বাস্থ্য সরঞ্জাম: দৈনিক মানসিক স্বাস্থ্য স্থিতিশীল রাখতে মুড ট্র্যাকিং, চিন্তাভাবনাভিত্তিক জার্নালিং এবং আবেগ প্রতিফলনের মতো সুবিধা রয়েছে। বিষণ্নতা ও উৎকণ্ঠার লক্ষণগুলোর প্রাথমিক শনাক্তকরণের জন্য আরও রয়েছে PHQ-9 এবং GAD-7 ভিত্তিক টেস্ট।
ইউজারের নিজের যত্ন সম্পর্কিত কাজ: ব্যবহারকারীদের একটি সুশৃঙ্খল জীবনধারা বজায় রাখতে এটি, যেসব দিনে ব্যবহারকারী নিজের যত্ন নেওয়া ভুলে যান, সেসব দিনে ব্যবহারকারীকে স্মরণ করিয়ে তার জীবনযাপন নিয়মিত রাখার অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনা দেবে।
জরুরি সহায়তা ও সংকটকালীন দিকনির্দেশনা: গুরুতর ক্ষেত্রে, ব্যবহারকারীর সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পেশাদার সহায়তা বা জরুরি সহায়তার দিকে নির্দেশনা দেবে।
অফলাইন-অ্যাক্সেসযোগ্য সামগ্রী ও সংস্থান: স্থানীয় নিবন্ধন, সম্পর্কিত গল্প, আবেগ প্রকাশের সরঞ্জাম এবং বাংলা ও ইংরেজিতে কিউরেটেড ভিডিও/অডিও সামগ্রী সরবরাহ করে।
‘মন তরঙ্গ’ প্রায় ১০ জন মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে প্রকল্পটি পর্যবেক্ষণে রাখছে এবং তারা সর্বদা সাহায্য করে যাচ্ছেন। প্রতিটি ইউজারের পোস্টে রিপ্লাইয়ের জন্য মনোবিজ্ঞান বিষয়ে পড়ুয়া প্রায় ১৫ জন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
আরও বিশদ জানতে ভিজিট করতে পারেন অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে– montorongo.com।
- ক্যানভাস অনলাইন
ছবি: মন তরঙ্গ’র সৌজন্যে

