skip to Main Content

ফিচার I অনিবার্য খাবার

কোথাও কেক, কোথাও-বা ফল। দেশ-দেশান্তরে বিয়ের ঐতিহ্যবাহী খাবারে থাকে বিচিত্র সব পদের সমারোহ। যেগুলো হাজির হতে থাকে বংশপরম্পরায়

দেশে দেশে বিয়ের খাবারে কিছু পদ অবধারিতই থাকে। সেগুলো খানিক ঐতিহ্য বহন করে। ফলে অন্য কোনো পদের পরিবর্তন আনা হলেও বছরের পর বছর ধরে একই রূপে সেসব থেকে যায় বিয়ের মেনুতে। যেমন ব্রাজিলে বিয়ের অনুষ্ঠানে ক্যান্ডিজাতীয় একটি বিশেষ খাবার থাকেই। নাম ‘বেম ক্যাসাডোস’। খাবারটি মূলত স্যান্ডউইচের মতো। ভেতরে দুটি ছোট কুকি দেওয়া হয়। অনেক সময় ‘ডুলসে ডি লেচে’ দেয়; যা তৈরি হয় দুধকে বেশি জ্বাল দিয়ে। এতই ঘন করা হয় যে তা ক্যারামেলের মতো হয়ে যায়। এই স্যান্ডউইচে ডিম, দই, জ্যাম, ক্রিম, মধুসহ আরও সুস্বাদু উপকরণ যোগ করা হয়। এরপর চিনির ওপর ঘুরিয়ে স্যান্ডউইচকে সুন্দর মোড়কে জড়ানো হয়। ব্রাজিলের এই বেম ক্যাসাডোস স্যান্ডউইচকে বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘ভালোভাবে বিবাহিত’। মোটামুটি সব শ্রেণির বিয়েতেই বিশেষ এই পদের উপস্থিতি দেখা যায়। মিষ্টি এই খাবার অনুষ্ঠানে খাওয়ার পাশাপাশি বাড়িতেও নিয়ে যায় অতিথিরা।
ফরাসি বিয়েতে ‘ক্রোকামবুস’ নামের একটি কেক বেশ ঐতিহ্যবাহী। তা দেখতে প্রায় আইফেল টাওয়ারের মতো। কেকটি ক্যারামেল কিংবা চকলেটে মোড়ানো থাকে। তারা সেটিকে চিনিযুক্ত আমন্ড, ফুল ও ফিতা দিয়ে খুবই সুন্দর করে সাজায়। ইতালিতে বিবাহসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী খাবারের পসরা থাকে। প্রায় ১৪টি পদ থাকে সেদিন। সেগুলোর মধ্যে স্টাফড মাশরুম, জলপাই, স্যালামি, পিকলড পেপার, ক্যালামারি, প্রসুট্টো, এন্টিপ্যাস্টি ইত্যাদি খাবার বিশেষ কদর পায়। পিকলড পেপার মূলত লবণ কিংবা ভিনেগারে ডোবানো বেলপেপার। ক্যালামারি হলো বেবি স্কুইড। শূকরের পায়ের অংশের মাংসের বিশেষ পদকে বলে প্রসুট্টো। এন্টিপ্যাস্টি হলো ইতালীয় ঐতিহ্যের অন্তর্গত একটি পদ। এ

সব আইটেমের সঙ্গে সে দেশের বিয়েতে পাস্তা, স্যালাদ ও স্যুপ থাকে। রাখা হয় বো-টাই নামের একটি খাদ্য; যা মূলত পাকানো খামির ভেজে তৈরি এক প্রকার বড়া। সেটিকে চিনিতে গড়িয়ে পরিবেশন করা হয়। তা ছাড়া আমন্ডের ক্যান্ডি বাক্সে ভরে রাখা হয় বিয়ের অনুষ্ঠানে। অতিথিরা সেটিকে বাড়ি নিয়ে যায়।
চীনের বিয়েতে শুধু পাত্র-পাত্রীর জন্য ‘ট্যাঙ ইউয়ান’ রাখা হয়। তারা বিয়ের আগের রাতে তা খায়। বিয়ের দিনও খায় কেউ কেউ। এটি মূলত একটি স্যুপ। তাতে গোল গোল ভাতের দলা ডোবানো থাকে। মিষ্টি স্বাদের। সেগুলো খাওয়ার প্রক্রিয়াও ভিন্ন। চিবিয়ে খাওয়া নিষেধ। বর-কনেকে ভাতের গোলাগুলো গিলে খেতে হয়। চীনা বিয়ের ঐতিহ্যবাহী খাবারে ১২-১৪ পদ থাকে। রাখা হয় বুনো রাজহাঁসের মাংস, পেকিং ডাক, সি-কিউকাম্বার, শার্ক ফিন স্যুপ, রোস্ট সাকলিং পিগ, সুইট রেডবিন স্যুপ ও সুইট বান।
ভারতীয় বিয়েতে মধুমিশ্রিত দইকে ঐতিহ্যবাহী মনে করা হয়। সে অঞ্চলের বিয়ের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার ‘মধুপাক’। তা ছাড়া তাদের বিয়েতে সপ্তাহখানেক ধরেই চলে নানান পদের আয়োজন। যেমন নান, তরকারি, রোস্ট ইত্যাদি। দেশটির শিখ ও পাঞ্জাবিদের মধ্যে বাগদানের দিন কনেপক্ষকে ‘মিঠাই’ খাওয়ানোর চল রয়েছে। বিশেষ করে মিষ্টান্ন কিছু পদ উপহার হিসেবে পায় মেয়ের পক্ষ। বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালে বর-বধূকে লাড্ডু খাওয়ানোর ঐতিহ্যও রক্ষা করে চলে কিছু ভারতীয়।
দক্ষিণ কোরিয়ায় কুল জাতীয় এক প্রকার ফল থাকে বিয়েতে। সেটির নাম জুজুবে। সেটির সঙ্গে কিছু চেস্টনাট নিজের কাছে রাখে কনে। নববধূ সেগুলো শ্বশুরবাড়ির লোকদের বিলায়। এই খাবার তাদের বিয়ের ঐতিহ্যে মিশে আছে। বিয়ের পর দক্ষিণ কোরিয়াতে ‘ইয়াক শিক’ নামের এক প্রকার খাবার খাওয়ার চল। পদটি ভাতের। তাতে ব্রাউন সুগার, মধু, কিশমিশ, চেস্টনাট, পাইননাট ও জুজুবে যোগ করা হয়। সে দেশের বিয়ের আরও একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো ‘কুক সু’। এটি মূলত একধরনের লম্বা নুডলস। তাতে ফল ও কিশমিশ যুক্ত করে পরিবেশন করা হয় বিয়েতে।
নরওয়েতে রাখা হয় ক্রান্সকেক। এটি তাদের ঐতিহ্য বহন করে। কেকটি মূলত আংটি আকৃতির। সেটি বেশ কিছু আংটি আকৃতির কেকের সমষ্টি। যেগুলো একটির ওপর আরেকটি বসানো হয়। ক্রান্সকেক বেশ নরম হয়। নরওয়ে ছাড়াও ডেনমার্কের কিছু স্থানে বিয়েতে এ ধরনের কেকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
গ্রিস ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলোতে বিয়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো এক প্রকার কাঠবাদাম। সেগুলোতে ক্যান্ডির প্রলেপ দেওয়া থাকে। স্থানীয় ভাষায় সেগুলোকে ‘কৌফেটা’ বলে। অবশ্য তাতে হোয়াইট চকলেট কিংবা চিনির প্রলেপ দেওয়া হলে নাম বদলে যায়। তখন সেগুলোকে ‘বম বম ইয়ারা’ বলা হয়।
বারমুডার বিয়ের খাবার ঐতিহ্য জুড়ে আছে কেক। সেটি আনার দায়িত্ব বর্তায় বর-কনের ওপরেই। বর সোনার তবকে মুড়িয়ে তা নিয়ে আসে। কনে আনে রুপার তবকে মুড়ে। এটিকে তারা স্থানীয় এক প্রকার মদ দিয়ে ভিজিয়ে খায়। জার্মানিতে বিয়ের জন্য রয়েছে আলাদা এক প্রকারের স্যুপ। নাম ‘হচজেইটসসুপ্পে’। তাতে থাকে মিটবল ও সবজি। এটি তৈরি করতেও বিশেষ দক্ষতা প্রয়োজন। সময় লাগে পাঁচ ঘণ্টা। সে দেশের বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য সময় পদটি বানাতে খুব একটা দেখা যায় না। বুলগেরিয়ানরা বিয়েতে রাখে রুটি। বিয়ের আগের দিন কনের মায়ের ওপর সেটি বানানোর দায়িত্ব বর্তায়। স্থানীয় ভাষায় সেটিকে বলে ‘পিটকা’। তা ছাড়া সে দেশের বিয়েতে মায়েরা বর কনেকে রুটি ও মধু খাওয়ায়। এই পদ দুটি তাদের বিয়ের খাবারের ঐতিহ্যের পরিচায়ক। নাইজেরিয়ান বিয়েতে কোলানাট নামের একটি খাবার অবধারিত। সেটি ভাগ করে না খেলে বিয়েই সম্পূর্ণ হয় না। ভিয়েতনামে মুগডাল ও টয়াপিওকা দিয়ে তৈরি এক প্রকার মিষ্টান্ন খাওয়া হয়। পদটির নাম ‘বানহ জু জে’। সুইডিস বিয়ের ঐতিহ্য জুড়ে আছে ‘প্রিন্সেসটার্টা’। এটি হলো কেক। ইউক্রেনে থাকে ‘কোরোভাই’। এটি এক প্রকার রুটি। স্বাদে মিষ্টি। বর ও কনের বাড়ির লোকেরা মিলে তা তৈরি করে। ফিলিপাইনের বিয়েতে রাখা হয় সুমান। এটি মূলত রাইসকেক। এক প্রকার কাস্টার্ডও সে দেশের বিয়ের খাবারের ঐতিহ্য। সেটিকে স্থানীয় ভাষায় ‘লেচে ফ্ল্যান’ বলে ডাকা হয়। মরক্কোতে বিয়েতে ট্যাজিন নামের একটি পদের উপস্থিতি মেলে। এটি এক প্রকার স্টু। সে দেশে মিষ্টান্ন হিসেবে এক ঝুড়ি ফলের বন্দোবস্ত করা হয় বিয়ের অনুষ্ঠানে।

ু ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top