skip to Main Content

ফিচার I বিয়ন্ড ব্রাইড

কারণ, শুধু কনেদের দখলে নেই এখন ব্রাইডাল জুয়েলারি। ইতিহাস থেকে অনুপ্রাণিত আধুনিক বরেরাও অনেকটা শখ করে গায়ে জড়াচ্ছেন নজরকাড়া সব গয়না। তার ওপর মিলছে তারকাদের আনুকূল্যও

হাতে বিয়ের আংটি, গলায় গোল্ডের চেইন আর খুব বেশি হলে বুকপকেটে একটা ব্রোচ—ব্যস! এর চেয়ে বেশি গয়না বরদের কাছে একটু বাড়াবাড়িই বটে। কিন্তু গেল ক বছরে গয়নায় ঝোঁক বেড়েছে বরদের। হীরা, রুবি, পান্না কিংবা মুক্তার নেকলেস থেকে পুরোদস্তুর ট্র্যাডিশনাল কুন্দন সেটিং জুয়েলারি পিস এখন অনায়াসেই পরতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে তো আরও এক ধাপ এগিয়ে। কখনো নেকপিসের জেমস্টোনের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করে নিচ্ছেন শেরওয়ানির বোতাম তো কখনো কনের গয়নার সঙ্গে ম্যাচ করে নিচ্ছেন নিজের নেকলেসটাও। অর্থাৎ আলাদা করে সময় দেওয়া হচ্ছে বরের গয়নার জন্য। বেছে নেওয়া হচ্ছে পাগড়ির সঙ্গে মানানসই পিস থেকে শেরওয়ানি সহযোগে পরার জন্য উপযোগী অ্যাকসেসরিজ। মডার্ন বরদের ব্রাইডালওয়্যার মুডবোর্ডের অনুপ্রেরণা রণভীর সিং, ভিকি কৌশল আর রণবীর কাপুরের মতো তারকাদের ওয়েডিং লুক।
তবে অনেকেরই হয়তো জানা, ভারতীয় উপমহাদেশে পুরুষদের গয়না পরার চল সেই আদিকাল থেকেই। রানিদের থেকে বেশি অলংকার পরতেন খোদ রাজারা। বৈদিক-পূর্ব আমলে হাত ও পায়ের আঙুলে আংটি পরতেন নারী-পুরুষ উভয়েই। ইউনিসেক্স এসব ফিঙ্গার রিং পরিচিত ছিল আরশি নামে। পেছনের দিকে মিনাকারী করা থাকত এগুলো। আরও ছিল মণিমালা—ইতিহাসের সবচেয়ে পুরোনো নেকলেসগুলোর মধ্যে একটি। যার নামের অর্থ মূল্যবান পাথরে ছড়ায় তৈরি মালা। এ ছাড়া গুলবান্দ, হার, হাসলি, কণ্ঠ এবং ত্রিরত্নে গড়ানো তামানিয়া ছিল পুরুষালি অলংকারগুলোর মধ্যে অন্যতম। মোগল আমলে গয়নার বাক্সে প্রথম জায়গা করে নেয় সারপেচ নামের গয়নাটি। বর্তমানে বিয়ের বরেরা এসব থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই গায়ে জড়াচ্ছেন গয়না। বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে শেরওয়ানি অথবা ওয়েডিং আউটফিট। তবে এ বছর কুন্দন, পান্না আর রুবির রমরমা থাকবে নওশার গয়নায়। মাল্টিলেয়ারড কালারড স্টোনের তৈরি নেকপিসের পাশাপাশি মুক্তার নিউট্রাল কালারও লুকে তৈরি করবে আধিপত্য। এ ক্ষেত্রে আইভরি আর ক্রিম শেডই প্রাধান্য পাবে বেশি। এ ছাড়া সোনার চেইনের লেয়ারের সঙ্গে পার্ল আর স্টোনের কম্বিনেশনে তৈরি গ্রুম জুয়েলারিরও কদর বাড়বে এ বছর। যারা এক্সপেরিমেন্টেশনে স্বচ্ছন্দ, শেরওয়ানির জরির সঙ্গে মিলিয়ে মাল্টিলেয়ারড চেইনযুক্ত ব্রোচ থাকতে পারে তাদের সংগ্রহে। এ ক্ষেত্রে মোটিফের ম্যাচিং গুরুত্বপূর্ণ। কালারড জেমস্টোন ছাড়াও পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকবে ডায়মন্ড আর পোলকি। আসছে ওয়েডিং সিজনে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকবে তিন লহরী মুক্তার মালার, যাতে যুক্ত থাকবে ডায়মন্ড পোলকি পেনডেন্ট। সে সঙ্গে এমারেল্ড স্ট্রিংও থাকবে ফেবারিটের লিস্টে। পার্ল এবং রুবির স্ট্রিংয়েরও কদর থাকবে সিজনজুড়ে। পোলকি সেটিংয়ের কণ্ঠ স্টাইল স্ট্রিংও থাকবে গ্রুম জুয়েলারির তালিকায়। যার সঙ্গে ইতিউতি জুড়ে নেওয়া যাবে এমারেল্ড আর পার্লও। তবে তা যেন আউটফিটের সঙ্গে মানানসই হয়।
এ বছর ওয়েডিং লুকে কো-অর্ডিনেটেড লুকের ট্রেন্ড থাকবে শীর্ষে। শুধু আউটফিটেই নয়, বর-কনের গয়নার ক্ষেত্রেও প্রাধান্য পাবে এটি। এ ক্ষেত্রে কাস্টমাইজেশনের অপশন নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন কনের ব্রাইডাল জুয়েলারির সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করে নেওয়া যাবে বরের গলার পেনডেন্ট। আবার কখনো বরের পকেটের ব্রোচ হয়ে যাবে কনের কানপাশা। একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে নিলে এমন অপশন মিলবে হাজারটা। আর তারকাদের ওয়েডিং লুক তো থাকছেই অনুপ্রেরণার জন্য। বলিউড হার্টথ্রব ভিকি কৌশল তার বিয়েতে পরেছিলেন জনপ্রিয় ডিজাইনার সব্যসাচীর হেরিটেজ জুয়েলারি কালেকশন থেকে বাছাই করা সব পিস। তার মাথার সাফায় ছিল হ্যান্ডক্রাফটেড সারপেচ বা কিলাঙ্গি। গলার স্টেটমেন্ট গোল্ড নেকপিসটি ছিল পান্না, ব্রিলিয়ান্ট ও রোজ কাট ডায়মন্ড, কোয়ার্টজ এবং টার্মালাইন খচিত। আরেক বলিউড সেলিব্রিটি রণবীর কাপুরকেও পরতে দেখা গেছে সব্যসাচীর হেরিটেজ জুয়েলারি কালেকশন। তার মাথার সাফাতেও ছিল আনকাট ডায়মন্ড, এমারেল্ড আর পার্ল বসানো সারপেচ। কানে ডায়মন্ড স্টাড আর গলায় মাল্টিলেয়ারড নেকপিসে কমপ্লিট হয়েছিল রণবীরের ওয়েডিং লুক। বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা রাজকুমার রাওকেও তার বিয়েতে পরতে দেখা গেছে কালচারড জাপানিজ পার্লের লহরে তৈরি নেকপিস। সেটাও সব্যসাচী হেরিটেজ জুয়েলারি কালেকশন থেকে নেওয়া। একই কালেকশনের জুয়েলারি পরতে দেখা গেছে জনপ্রিয় বলিউড অভিনেতা রণভীর সিংকেও। মাল্টিলেয়ারড গার্নেট নেকপিসের সঙ্গে তার গলায় নজর কাড়ছিল এমারেল্ড খচিত প্যারট পেনডেন্টের পোলকি ডায়মন্ড নেকলেস। সামনে যারা বিয়ের পরিকল্পনা করছেন, তারাও সংগ্রহে রাখতে পারেন এমন কিছু কনটেম্পরারি স্টাইল জুয়েলারি।

সারপেচ বা কিলাঙ্গি
পাগড়ি বা সাফার জন্য তৈরি ব্রোচ বলা যায় একে। এ ক্ষেত্রে পাগড়ি প্রিন্টেড হোক বা সলিড—দুটোর সঙ্গেই চমৎকার দেখাবে এ জুয়েলারি পিস। সলিড গোল্ড রঙেরগুলো মানিয়ে যাবে সব ধরনের পাগড়ির সঙ্গেই। আর এতে যদি কালারফুল জেমস্টোন খচিত থাকে, তাহলে তো কথাই নেই।
নেকপিস
বরের জুয়েলারির ক্ষেত্রে মাস্ট হ্যাভ পিস এগুলো। লেয়ারড পার্ল স্ট্রিং এ ক্ষেত্রে ক্ল্যাসিক, মানিয়ে যাবে প্যাস্টেল রঙা শেরওয়ানি আর কুর্তার সঙ্গে। লুকে আরেকটু স্পার্কলি ভাব চাইলে আনকাট ডায়মন্ড অথবা জেমস্টোনে তৈরি স্ট্রিং নেকলেস পরে নিতে পারেন বরেরা। লেয়ারড নেকলেস জুড়ে দেওয়া যেতে পারে ব্রোচের সঙ্গেও। যাদের স্টেটমেন্ট লুক চাই, তাদের জন্য হায়দরাবাদী নিজামী স্টাইলের সাতলহরী হারও মন্দ দেখাবে না কিন্তু। আর ট্র্যাডিশনাল টাচের জন্য লিঙ্কড গোল্ড চেইনই যথেষ্ট।
অ্যাকসেসরিজ
যেসব বর জুয়েলারিতে তেমন স্বচ্ছন্দ নন, তাদের জন্যও রয়েছে অপশন। আউটফিটের বাটন সে ক্ষেত্রে হয়ে উঠতে পারে স্টেটমেন্ট পিস। ব্রোচও মন্দ দেখাবে না। তালিকায় থাকতে পারে ব্রেসলেট আর কাফলিঙ্কও। এগুলোর প্রতিটিই কনের গয়নার সঙ্গে মানিয়ে কাস্টমাইজ করে নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে পোলকিই সেরা অপশন। আর টাক্সিডো পরলে তাতে জুড়ে নেওয়া যায় ডায়মন্ড লেপেল পিন।
তবে খেয়াল রাখা চাই, কনের গয়নাকে যেন আবার ছাপিয়ে না যায় বরের গয়না।
 অর্চনা সাহা
মডেল: হাসিন
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ওয়্যারড্রোব: ওটু
জুয়েলারি: উযমাহ্
ছবি: হাদী উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top