skip to Main Content

ফরহিম I পরতে প্রাণ

এই আর্টে মাস্টারিংটাই মুখ্য। সিগনেচার সেন্ট তৈরির জন্য। ব্যক্তি স্টাইলের সঙ্গে মানানসই এমন কিছু তৈরিতে সৃজনশীল হওয়া কিন্তু খুব জরুরি

একাধিক সুগন্ধির এলোমেলো স্তরবিন্যাস নয়; বরং পুরোটাই চিন্তাশীল রসায়নের বিষয়। তাই শিল্প বললেও অত্যুক্তি হবে না। একাধিক সুগন্ধি ব্যবহারে একদম নিজের জন্য তৈরি অভিনব কোনো সুবাস তৈরির চেষ্টাই ফ্র্যাগরেন্স লেয়ারিংয়ের মূল উদ্দেশ্য।
লার্ন লেয়ারিং
এর মানে একসঙ্গে একাধিক পারফিউমে ‘স্প্রে ফেস্ট’ করা নয়! বরং একই ফ্র্যাগরেন্স হাউসের ম্যাচিং বডি কেয়ার পণ্য দিয়ে ধাপে ধাপে সুগন্ধ তৈরি। যেমন বাসায় ব্যবহৃত বডি ওয়াশ ব্যবহারের পর একটি ভালো পারফিউম স্প্রে করা। আবার ভালো একটি সুগন্ধি সাবান মেখে গোসল সারার পর হালকা ভেজা ভেজা শরীরে সে একই ব্র্যান্ডের বডি অয়েল মাসাজ। এভাবে মিক্স ম্যাচ করে পণ্য ব্যবহার করলে ফ্র্যাগরেন্স লেয়ারিংয়ের ফল মিলবে।
নতুনদের জন্য সবচেয়ে সহজ পথ হলো ফ্র্যাগরেন্স গিফট সেট থেকে শুরু করা। কারণ, সেগুলো ব্র্যান্ড থেকে সাজানো থাকে। একসঙ্গে এক বক্সে মেলে স্প্রে, লোশন আর ডিওডোরেন্ট।
যারা অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা কিছু করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটা একদম পারফেক্ট। নিজস্ব একটি গন্ধ তৈরি করার স্বাধীনতা তো থাকবেই; সঙ্গে সুগন্ধিও হবে দীর্ঘস্থায়ী। অনেক বিখ্যাত ফ্র্যাগরেন্স ব্র্যান্ড বডি কেয়ার পণ্যের ফর্মুলা এমনভাবে তৈরি করে, যাতে গন্ধের প্রভাব আরও বাড়ে। আর কেউ যদি খুব সাবলীল কিছু চায়, শুধু বডি কেয়ার পণ্যই ব্যবহার করা যেতে পারে; যা মৃদু মিনিমালিস্টিক সুগন্ধে ভরিয়ে রাখবে চারপাশ।
ফ্র্যাগরেন্স লেয়ারিংয়ের সুবিধা
 নিজের একটি ইউনিক বা সিগনেচার ঘ্রাণ তৈরি করা যায়;
 সুগন্ধ দীর্ঘ সময় ত্বকে স্থায়ী থাকে;
 একই ব্র্যান্ডের বডি কেয়ার পণ্যের সঙ্গে পারফিউম মিলিয়ে সুগন্ধের গভীরতা ও ভারসাম্য ওঠানামা করানো যায়;
 হালকা ও মিনিমাল ঘ্রাণ তৈরি করতে চাইলে শুধু বডি কেয়ার প্রোডাক্ট মেখেও লেয়ারিং সম্ভব;
 স্কিন টাইপ ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে পারফিউম নির্বাচন করা সহজ;
 একাধিক পারফিউম বা প্রোডাক্টের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচে নতুন সুগন্ধের আবিষ্কার সম্ভব;
 গিফট সেট বা ট্র্যাভেল সাইজ পণ্য দিয়েও সহজে এক্সপেরিমেন্ট করা যায়;
 পারফিউমের ব্যবহার কমিয়ে গন্ধের ঘনত্ব বাড়ানো যায়, যা দীর্ঘ মেয়াদে সাশ্রয়ী;
 এটি ব্যক্তিত্ব, মুড ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার দারুণ কৌশল।
ঘ্রাণে সচেতনতা
লেয়ারিংয়ের সময় ঘ্রাণের নোটগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে:
 টপ নোট: স্প্রে করার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে যে ঘ্রাণ পাওয়া যায় (সাইট্রাস, হালকা ফুল ইত্যাদি)।
 হার্ট নোট: মূল ঘ্রাণ, যা শরীরে একটু বসে গেলে প্রকাশ পায় (জেসমিন, গোলাপ, ল্যাভেন্ডার ইত্যাদি)।
 বেস নোট: শেষ পর্যন্ত যেটা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয় (স্যান্ডালউড, মাস্ক, ভ্যানিলা, ইত্যাদি)।
মনে রাখা চাই
 একসঙ্গে খুব বেশি পারফিউম না মেশানো;
 একে অপরকে কমপ্লিমেন্ট করে এমন নোট বেছে নেওয়া;
 স্কিনে আগে ময়শ্চারাইজার বা বডি অয়েল ব্যবহার করা, ফ্র্যাগরেন্স দীর্ঘস্থায়ী হবে এতে;
 আগে হালকা, পরে ভারী নোট ব্যবহার করা।
ত্বকের ধরনভেদে
 শুষ্ক ত্বক: সুগন্ধ বেশি সময় থাকে না, তাই আগে বডি অয়েল বা লোশন ব্যবহার করলে ভালো।
 তৈলাক্ত ত্বক: সুগন্ধ তুলনামূলক বেশি সময় থাকে।
আবহাওয়া অনুযায়ী
 গ্রীষ্মকাল: হালকা, সাইট্রাসি ও ফ্লোরাল নোটে পারফিউম; লেয়ার করতে হবে শাওয়ার জেল ও বডি স্প্ল্যাশ দিয়ে।
 শীতকাল: উডি, মাস্কি, স্পাইসি, ভ্যানিলা ও কফি নোটের প্রাধান্য আছে এমন পারফিউম; বডি অয়েল ও লোশনের সঙ্গে লেয়ারিং আদর্শ।
লেয়ারিং কম্বো
 ফ্রেশ ও প্রফেশনাল সুগন্ধের জন্য লেয়ার করা যায় সাইট্রাস এবং উডি;
 শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী সুগন্ধের জন্য লেয়ার করতে হবে ল্যাভেন্ডার ও চন্দন;
 ক্ল্যাসিক সুগন্ধের জন্য জুঁই ও কস্তুরীর লেয়ারিং পারফেক্ট;
 একেবারে ফ্রেশ ও হালকা সুগন্ধের জন্য লেয়ার করা যায় গ্রিন টি ও লেমন ভারবেনা।
স্থানীয় উপাদানে
বাংলাদেশি বা দক্ষিণ এশীয় উপাদান দিয়ে লেয়ারিং করতে চাইলে, তা-ও সম্ভব।
 মেহেদি পাতার নোট ও গোলাপজল ব্যবহার হতে পারে হেরিটেজ ও হারবাল ফ্লোরাল সুগন্ধের জন্য;
 চন্দন ও নারকেল তেল মিশিয়ে তৈরি হবে কড়া উষ্ণ ঘ্রাণ;
 কমলালেবুর খোসা ও তেজপাতা ইনফিউশন ব্যবহার তৈরি করবে স্পাইসি ঘ্রাণ।
কোন বেলায় কোনটা
রাত ও দিনের সুগন্ধির মধ্যে তফাত রয়েছে; যেমন—
 সকালের জন্য হালকা ও সতেজ সুগন্ধি; এই সময়ের জন্য উপযুক্ত নোট হচ্ছে সাইট্রাস (লেমন, বার্গামট), মিন্ট, গ্রিন টি, ল্যাভেন্ডার।
 দুপুরের জন্য ক্লিন ও ক্ল্যাসিক ঘ্রাণ; যার জন্য উপযুক্ত নোট হচ্ছে ফ্লোরাল (রোজ, লিলি), অ্যাকুয়াটিক, হালকা উডি।
 বিকেলের জন্য একটু উষ্ণ ও আকর্ষণীয় ঘ্রাণ, যা ধীরে ধীরে ঘ্রাণকে আরও তীব্র করবে; এই সময়ের জন্য উপযুক্ত নোট হচ্ছে স্যান্ডালউড, ভ্যানিলা, স্পাইসি।
 সন্ধ্যা ও রাতের জন্য গভীর, মোহময় ও দীর্ঘস্থায়ী ঘ্রাণ; এর জন্য উপযুক্ত নোট হতে পারে ওউদ, মাস্ক, প্যাচুলি, টনকা বিন, চকলেট অথবা কফি।
দীর্ঘস্থায়িত্বের সূত্র
 সঠিক জায়গায় স্প্রে করতে হবে; যেমন ঘাড়, কবজির ভেতর, কানের পেছনে, কনুইয়ের ভাঁজ, হাঁটুর পেছনে।
 স্কিনে ময়শ্চারাইজার অথবা অয়েল মাখিয়ে তারপর পারফিউম স্প্রে করা যায়; কারণ, শুষ্ক ত্বকে ঘ্রাণ টেকে না।
 স্প্রে করার জায়গায় হালকা ভ্যাসলিন মাখিয়ে নিলে এটি ঘ্রাণ ধরে রাখে।
 হালকা করে চুল, স্কার্ফ বা জামার ভেতরের দিকে স্প্রে করা যেতে পারে (যেন দাগ না পড়ে)।
 লেয়ারিং করার সময় ক্রম মেনে চলা যায়: শাওয়ার জেল → বডি লোশন বা অয়েল → পারফিউম → হেয়ার মিস্ট।
 স্বর্ণা রায়
মডেল: সাদাফ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top