পানির অপর নাম জীবন। আর সুস্থ থাকতে ভালো স্বাস্থ্যের বিকল্প নেই। কিন্তু পানির ভালোমন্দ না জেনে পানি পান করলে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মূলত মানুষের শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে, একজন মানুষের জন্য ঠান্ডা পানি পান করা ভালো নাকি গরম পানি। যদিও ঠান্ডা কিংবা গরম উভয় প্রকার পানিরই ভালো দিকের পাশাপাশি মন্দ দিকও আছে।
ঠান্ডা পানির মন্দ দিক সম্পর্কে বলতে গেলে, এ পানি যকৃতের ওপর প্রভাব ফেলে হজমে সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, খাবার সময় ৩৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটে আনতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এই তাপমাত্রা বজায় রাখতে হজম প্রক্রিয়া থেকে রক্ত সরবরাহ সরিয়ে রাখতে হয় শরীরকে। এর ফলে স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা ঘটে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, ঠান্ডা পানি পানে গ্যাসট্রিক রস ও অন্যান্য অন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া ঠান্ডা পানি পান করার সঙ্গে মাইগ্রেনের ব্যথা জড়িত। নিয়মিত ঠান্ডা পানি পান করলে ‘একালেইসিয়া’ দেখা দিতে পারে।
আবার ঠান্ডা পানি পানের কিছু সুফলও আছে। ব্যায়ামের সময় ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরে তাপ উৎপাদন হওয়া নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর ফলে শরীরচর্চার ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঠান্ডা পানি শরীরের ক্যালরি কমায়। ফলে শরীরের ওজন কমে। তবে এখানে ঠান্ডা পানি বলতে কিন্তু বরফ গলা পানিকে বলা হচ্ছে না।
এক গবেষণা অনুযায়ী, ঠান্ডা পানি হৃদপিণ্ডের স্পন্দনের গতি কমায়। ‘টেন্থ ক্রানিয়াল নার্ভ’ বা ‘ভেগাস নার্ভ’কে উত্তেজিত করে ঠান্ডা পানি। এই স্নায়ু প্রধান স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশ, যা হৃদযন্ত্রের গতি সমন্বয় করে।
ঠান্ডা পানির বিপরীতে কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে। তবে কুসুম গরম পানি পান করলে তৃষ্ণা তুলনামূলকভাবে কম লাগে। ফলে পানি কম পান করা হয়। এ কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। একই ঘটনা ঘটতে পারে ঠান্ডা পানি পান করলে। কেননা, ঠান্ডা পানি দ্রুত তৃষ্ণা নিবারণ করে। এর ফলে পানি কম পান করা হয়। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
তাহলে কী করা উচিত? আগেই বলা হয়েছে, কোন তাপমাত্রার পানি পান করা ভালো হবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির শরীরের ওপর। একেক জনের শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থা একেক রকম। খাবারের পর কুসুম গরম পানি বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করাই ভালো।