কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষত ফেসবুকে ঘুরছে বর্ষিয়ান এক নারীর একগুচ্ছ গ্লামারাস ছবি। মূলত ভারতীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘তোরানি’র প্রোডাক্টের মডেল ফটোগ্রাফি ওগুলো। আর ওই নারী মডেলের মুখটা অনেকেরই চেনা-চেনা; অনেকে আবার তাকে বহুদিন ধরেই চেনেন।
যারা চেনেন না, তাদের বলছি। ওই মডেলের নাম সীমা আনন্দ। বয়স ৬১।
ভারতীয় নাগরিক ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী সীমা মূলত একজন স্টোরিটেলার ও মিথোলজিস্ট। উইমেন’স ন্যারেটিভে বিশেষত্ব রয়েছে তারা। এমনকি তিনি একজন পুরস্কারজয়ী লেখিকা ও করপোরেট গুরু। ‘কামসূত্র’ এক্সপার্টও।
নিজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ‘স্টোরি থেরাপি’ প্রসঙ্গে সীমা লিখেছেন: ‘আপনার পক্ষে যেকোনো কিছুই করা সম্ভব, আর এ জন্য আপনার কাছে শুধুই একটি গল্প থাকা চাই।’
তিনি আরও লিখেছেন, “১৯৮২ সালের কথা আমি কোনোদিনই ভুলতে পারব না। ভয়ানক এক দুর্ঘটনায় আমার বড়ভাই ছয় মাস হাসপাতালে ছিলেন। তাকে চাপা দিয়েছিল একটা ট্রাক। ওই বছরই আমার বাবাকে খুন করা হয়, আমাদের বাড়িতেই, পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলি করে।
“বাবা ছিলেন পাবলিক ফিগার। ফলে আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থাগুলো আমাদের ওপর নজর রাখতে থাকে। আমি আর আমার মা হয়ে পড়ি গৃহবন্দি। আমরাই অপরাধী নাকি আমরাই পরবর্তী টার্গেট– এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছিল না তারা।
“বাবা যখন খুন হন, তখন আমি ও মা– দুজনেই ছিলাম অফিসে। সেখানেই খবরটা পাই। আর বাসায় ফিরে দেখি তার লাশ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাবার দেখা আর কোনোদিনই পাইনি আমি। তাকে বিদায় বলতেও পারিনি। অংশ নিতে পারিনি তার শেষকৃত্যেও।
“এমনকি আমার ভাইকে দেখতে যাওয়ারও অনুমতি ছিল না আমাদের। তিনি তখন একটি কাটা পা, ভাঙা ঘাড়, চিড় ধরা খুলি ও কতগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হাড় নিয়ে পড়ে ছিলেন হাসপাতালে। নিজের সবকিছু তার নিজেকেই সামলাতে হয়েছিল।
“এমন ঘটনা আপনি কী করে ভুলবেন? আমি কখনো ভুলতে পারব বলে মনে হয় না। এ সময়েই আমার এক বন্ধু আমাকে বলল, ‘জীবনকে তোমার ছোট ছোট গল্পের একটা সমাহার হিসেবে দেখতে হবে। তাহলেই তুমি সেইসব গল্পে একটু ছোটখাট পরিবর্তন ঘটাতে পারবে।’”
আর এভাবেই স্টোরিটেলার হয়ে উঠেছেন সীমা আনন্দ। ব্যক্তিজীবনে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে লন্ডনে বসবাস তার।